সারা দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে গৃহীত মেগা প্রকল্প্লের আওতায় জেলা–উপজেলা পর্যায়ের সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে একটি করে ৬ তলা এবং বিভাগীয় সদর (মহানগর) এলাকার স্কুলে একটি করে দশতলা নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। এই প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রাম মহানগরের ৯টি সরকারি স্কুলে একটি করে নতুন দশতলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়। তবে সম্প্রতি এই সিদ্ধান্তেও বদল এসেছে। মহানগরের ৯টির স্থলে মাত্র দুটি সরকারি স্কুলে নতুন দশ তলা ভবন হবে।
বাকি স্কুলগুলোতে নির্মিত হবে ৬ তলা করে ভবন। মেগা প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপিতে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ছে হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এ ডিপিপি ৫ সেপ্টেম্বর (আজ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)’র বৈঠকে উঠছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন।
যে দুটি স্কুলে দশ তলা ভবন : চট্টগ্রাম মহানগরের ৯টি সরকারি স্কুল নতুন অবকাঠামো নির্মাণে মেগা প্রকল্পের আওতাভুক্ত রয়েছে। ৯টির মধ্যে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে দশ তলা করে ভবন নির্মিত হবে। বাকি ৭টি স্কুলে নির্মিত হবে ৬ তলা ভবন। এই ৭ স্কুলের মধ্যে রয়েছে– চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কলজিয়েট স্কুল, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়। প্রথম দফা ডিপিপিতে সবকয়টি স্কুলে ৬ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলেও পরবর্তীতে মহানগর এলাকার সরকারি স্কুলগুলোতে ৬ তলার পরিবর্তে ১০ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগরের ৯টি স্কুলেই একটি করে দশ তলা ভবন নির্মাণের কথা। কিন্তু সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিপিতে এই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন মহানগরের মাত্র দুটি সরকারি স্কুলে (খাস্তগীর ও নাসিরাবাদ বয়েজ) দশ তলা করে ভবন হবে। এ তথ্য নিশ্চিত করে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আজাদীকে বলেন, সারাদেশের ৩২০টি সরকারি স্কুলের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ১৪৮টি এবং জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ১৭২টি সরকারি স্কুল রয়েছে। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের ১৭২টি স্কুলে সার্র্ভে (জরিপ) করা হয়েছে। এর মধ্যে যেসব স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই হাজারের বেশি এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান, সেসব স্কুলে দশ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সারাদেশে এ ধরনের ১৮টি স্কুল চূড়ান্ত করা হয়েছে। যেগুলোতে দশ তলা ভবন হবে। এর মাঝে চট্টগ্রাম মহানগরের দুটি স্কুল রয়েছে। এছাড়া ঢাকায় ৮টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২টি, খুলনায় ৩টি এবং সিলেট, সাতক্ষীরা ও চাপাইনবাবগঞ্জে ১টি করে স্কুলে দশ তলা ভবন হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই মেগা প্রকল্পে রয়েছে ৩২০টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নের বড় প্রকল্পও। এর আওতায় প্রত্যেক সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে নতুন করে একটি ৬ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে প্রকল্পের ডিপিপি এবং ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৮ সালের ১৮ মে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতেও (একনেকে) পাস করা হয়। তবে পরবর্তীতে মেট্রোপলিটন এলাকার সরকারি স্কুলগুলোতে ৬ তলার পরিবর্তে দশ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশোধিত ডিপিপিতে এটি চূড়ান্তকরণের কথা বলা হয়। তবে প্রথম দফা ডিপিপি পাশের ৫ বছর পর এ প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি মঙ্গলবার (আজ) একনেক–এ উঠছে। এতে চট্টগ্রাম মহানগরের ৯টির স্থলে মাত্র দুটি স্কুলে দশ তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে।
সংশোধিত এই ডিপিপি মঙ্গলবার (আজ) পাস হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন।
প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে হাজার কোটি টাকা :
সারাদেশের ৩২০টি সরকারি স্কুলে অবকাঠামো নির্মাণের এই প্রকল্পের ডিপিপি প্রথম দফায় ২০১৮ সালের ১৮ মে একনেক–এ পাস হয়। ওই সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। তবে বর্তমানে সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে ৪ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। হিসেবে এই মেগা প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। প্রথম দফায় ডিপিপি পাসের পর দুই দফায় দর বেড়েছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালে একবার এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশোধিত ডিপিপিতে নতুন দর বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আর নতুন দরে প্রকল্পের ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। কারণ, আগের দরে ৬ তলা একটি ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রতিটি ৬ তলা ভবন নির্মাণে কক্ষ ভেদে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৯ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকা। একইভাবে দশ তলা ভবন নির্মাণেও ব্যয় বাড়ছে। সে হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বিক ব্যয় বাড়ছে।
বাড়ছে সময়সীমাও :
ব্যয়ের পাশাপাশি একই সাথে বাড়ছে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমাও। শুরুতে এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। তবে করোনা পরিস্থিতিতে দুই অর্থবছর (২০১৯–২০ এবং ২০২০–২১) এ প্রকল্পের অর্থ ছাড় বন্ধ থাকে। অর্থ ছাড় না হওয়ায় প্রকল্পের কাজও থমকে যায়। বর্তমান সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দশতলা ভবনে দুটি লিফট এবং দুটি সিঁড়িসহ প্রতিটি ভবনে টানা বারান্দা, ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেট, সুপেয় পানি সরবরাহ, মেয়েদের জন্য পৃথক কমন রুম, শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধাসহ স্মার্ট ক্লাসরুম থাকবে। তাছাড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হবে প্রকল্পভুক্ত সব স্কুলে। এছাড়া আসবাবও সরবরাহ করা হবে সবকয়টি স্কুলে।