ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি করে সেরকমই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মীরসরাই উপজেলা সদরের ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসকরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতাধীন এই কেন্দ্র বদলে দিয়েছে পুরো উপজেলার চিকিৎসা সেবার চিত্র। হাসপাতালে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাড়ছে গর্ভবতী নারীদের নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা। চলতি বছরের ৮ মাসে হাসপাতালে অন্তত ২২২ নারীর সন্তান প্রসব হয়েছে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে। অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে নিরুৎসাহিত করছেন চিকিৎসকরা। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে সন্তানসম্ভবা নারীদের। আধুনিক এ যুগে জীবনমান উন্নত হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থারও উন্নতি হয়েছে অনেকগুণ। একসময় প্রসবকালে ব্যথার অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর মুনাফার লোভ এবং মা ও তার পরিবারের অসচেতনতার কারণেই সিজারিয়ান অপারেশনে আগ্রহ বাড়ে নারীদের। কমতে থাকে নরমাল ডেলিভারি। তবে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মীরসরাই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারি হয়েছে প্রায় ২২২ জনের।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ২৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৬টি, মার্চে ৩০টি, এপ্রিলে ২৭টি, মে মাসে ৩৬টি, জুনে ৩৮টি, জুলাই মাসে ১৭টি এবং চলতি মাসের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্মদান করেছেন ২০ জন নারী। এই হিসাবের বাইরেও রয়েছে কিছু নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা।
উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের রবিউল হোসাইনের স্ত্রী ফারজানা জানান, তার প্রথম সন্তানটি নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে হওয়ায় সবাই খুব খুশি। সিজার করলে যেমন টাকাও বেশি খরচ, তেমনি পরবর্তীতে আমি ও বাচ্চা দুইজনকেই ভুগতে হত।
সাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী গ্রামের কৃষক আরমান হোসেনের স্ত্রী জেসমিন আকতার কিছুদিন আগে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে অনেকে ক্লিনিকে সিজার করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ১০ শয্যা বিশিষ্ট মীরসরাই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসকরা অভয় দিয়ে দায়িত্ব নিলে এখানে ভর্তি হই। এখানে নরমাল ডেলিভারিতে আমার সন্তান জন্মলাভ করেছে। আমি এবং ছেলে দুইজনই সুস্থ আছি।
১০ শয্যা বিশিষ্ট মীরসরাই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাসরীন সুলতান জানান, এটি চালু হওয়ার পর থেকে আমি, আমার উপ–সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সুব্রত গোলদার, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক জবা নাথ তারা, সহকারী নার্সিং এটেনডেন্ট রুমা রানী কর্মকারকে নিয়ে কাজ করছি। এলাকায় এলাকায় গিয়ে করছি নারীদের কাউন্সেলিং। দালাল চক্র কিংবা দাইমাদের (ধাত্রী) বাধা উপেক্ষা করে এর সফলতা পেয়েছি। দিন দিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না।












