৮ ঘণ্টা বন্ধ ডায়ালাইসিস সেবা, দুর্ভোগে রোগীরা

চমেক হাসপাতালের স্যান্ডর সেন্টার আপাতত চালু হলেও কাটছে না অনিশ্চয়তা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

সরকারের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা না পাওয়ায় গতকাল বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিচ তলায় কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ রাখে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড। হঠাৎ ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করায় দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনরা দুর্ভোগে পড়েন। আগাম ঘোষণা ছাড়া সেবা বন্ধ রাখায় সেন্টারের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন তারা। যদিও পরবর্তীতে বিকেল ৪টার দিকে পুনরায় সীমিত আকারে এ সেবা চালু করা হয়েছে। তবে সীমিত আকারে চালু করা হলেও এখন থেকে এ ডায়ালাইসিস সেবা চালু রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ডায়ালাইসিস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড-এর ম্যানেজার (হিসাব) নাজমুল হাসান আজাদীকে বলেন, আমরা সেবা বন্ধ রাখতে চাই না। কিন্তু বেশি টাকা বকেয়া থাকায় সাপ্লাইয়াররা আমাদের আর প্রয়োজনীয় ওষুধ ও কাঁচামাল সরবরাহ করছে না। আর ওষুধ ও কাঁচামাল না পেলে ডায়ালাইসিস সেবা অব্যাহত রাখা সম্ভব না। কয়েক দিনের মাঝে বিল পরিশোধ করা হবে মর্মে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে কোনোভাবে আপাতত সেবা চালু রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু কাঁচামাল না পেলে তাও কিন্তু সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। অর্থাৎ সেবা চালু রাখা সম্ভব হবে, এমন নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারছি না।
প্রসঙ্গত, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও চমেক হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসে দুটি সেন্টার স্থাপন করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড। সেবাদান বাবদ সরকারের কাছ থেকে ২৩ কোটি টাকা পাওনা বকেয়া রয়েছে দাবি করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে একযোগে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে গত ৫ জানুয়ারি থেকেও দুটি সেন্টারে একযোগে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর আগের দিন (৪ জানুয়ারি) রাতেই ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে প্রতিষ্ঠানটি। স্যান্ডর কর্তৃপক্ষের দাবি- ওই দিন (৪ জানুয়ারি) বৈঠকে এক সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া পাওনা পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করে। সরকারের ওই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু প্রায় মাস হতে চললেও সরকারের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা পাওয়া যায়নি। আর সরকারের কাছ থেকে বিল না পাওয়ায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না স্যান্ডর। যার কারণে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের আর কাঁচামাল সরবরাহ করছে না। এতে করে ডায়ালাইসিস সেবা চালু রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার (হিসাব) নাজমুল হাসান। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের নিচতলায় স্থাপন করা স্যান্ডরের ডায়ালাইসিস সেবা কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ। এর সামনে ৪০/৫০ জন রোগী ও তাদের স্বজন সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে-বসে বিক্ষোভ করছিলেন। কেউ কেউ স্লোগানও দিচ্ছিলেন। সেবা বন্ধ রাখা যাবে না/রোগী মারা গেলে দায় নেবে কে?
বোয়ালখালী থেকে ডায়ালাইসিসের জন্য এসেছিলেন মো. আলমগীর। সপ্তাগে তিনদিন এখানে এসে ডায়ালাইসিস করান তিনি। রুটিন মেনে বুধবার (গতকাল) সকালেও সেবা নিতে ছুটে এসেছেন। কিন্তু এসে দেখেন সেন্টার বন্ধ। কোথাও কেউ নেই। জানতে চাইলে আলমগীরের বোন বলছিলেন, এখানে এসে দেখছি, সেন্টার বন্ধ। ডায়ালাইসিস নাকি হবে না। ডায়ালাইসিস না হলে আমার ভাইয়ের কি হবে? আমরা কোথায় যাবো। বাইরে গেলে তো অনেক টাকা খরচ। আমাদের তো সামর্থ্য নেই। এই রোগীর মতো আরো বহু রোগী ও স্বজন উদ্বেগ নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন সেন্টারের সামনে। ওই সময় হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নুরুল আলম আশেককে রোগীদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়। জানতে চাইলে এসআই নুরুল আলম আশেক আজাদীকে বলেন, সেন্টারের দরজায় ৩১ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ সাঁটানো দেখছি। তহবিল সংকটে দুয়েক দিনের বেশি সেবা চালু রাখা সম্ভব হবে না মর্মে নোটিশে উল্লেখ রয়েছে। রোগীরা ডায়ালাইসিসের জন্য এসে সেন্টার বন্ধ পেয়ে এখানে বিক্ষোভ করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র শবে মেরাজ ২৮ ফেব্রুয়ারি
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাণের তাগিদে বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দিতে হবে