নগরীর বহদ্দারহাটে সিডিএ’র নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৩ জন নিহতের মামলায় রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ে চার্জশিটভুক্ত আট আসামির প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদণ্ড ও তিন লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের ৪র্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞা এ রায় ঘোষণা করেন।
এ সময় আট আসামির সবাই কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত আট আসামি হলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার অ্যান্ড পারিসা ট্রেড সিস্টেমের প্রকল্প ব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন, মনজুরুল ইসলাম, প্রকৌশলী আবদুল জলিল, আমিনুর রহমান, আবদুল হাই, মোশাররফ হোসেন, মান নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলী শাহজাহান আলী ও রফিকুল ইসলাম।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, সাক্ষীরা সুনির্দিষ্টভাবে কারো নাম না বললেও মামলার দায় এড়াতে পারে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দায় এড়াতে পারে না প্রতিষ্ঠানটির হয়ে যারা প্রকল্পের কাজে যুক্ত ছিলেন তারাও। এ জন্য আট আসামিকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের জন্য বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের গার্ডার ধস দুর্ঘটনা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলেও পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন আদালত। পর্যবেক্ষণে আদালত আরো বলেন, দেশে এখন উন্নয়নের জোয়ার চলছে। এমন অবস্থায় আসামিদের সাজা দেওয়া না হলে ভবিষ্যতে কোথাও কোন দুর্ঘটনা ঘটলে দোষীরা পার পেয়ে যাবে। সিডিএ’র কর্মকর্তা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কেন চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হল তা বোধগম্য হয়নি জানিয়ে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, অজ্ঞাত কারণে তাদের চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজের সময় প্রকল্প এলাকায় কোন সিকিউরিটি মেইনটেইন করেন নি উল্লেখ করে বলা হয়, পথচারীরা কোন দিকে কিভাবে হাঁটাচলা করবে সে বিষয়ে কোন গাইডলাইন ছিল না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অনুপম চক্রবর্তী আজাদীকে বলেন, ২৯ জন সাক্ষীর মধ্য থেকে ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেছেন। দণ্ডবিধির মোট দুটি ধারায় আসামিদের সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩০৪ ক ধারায় আট আসামির প্রত্যেককে ৫ বছরের কারাদণ্ড, তিন লাখ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপর ধারাটি হচ্ছে ৩৩৮। এ ধারায় প্রত্যেককে ২ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আদালতসূত্র জানায়, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ধসের ঘটনাটি ঘটে। এতে চাপা পড়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় চান্দগাঁও থানার এসআই আবুল কালাম আজাদী বাদী হয়ে ২৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে প্রকল্প পরিচালক সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী তানজিব হোসেন ও উপসহকারী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে আসামি করা হয়। পাশাপাশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মীর আখতার অ্যান্ড পারিসা ট্রেড সিস্টেমের ১০ জন এবং বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ১২ জনকে আসামি করা হয়।
তদন্ত শেষে পরের বছরের ২৪ অক্টোবর এজাহারে নাম না থাকা একজনসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ও চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম শহীদুল ইসলাম। চার্জশিটভুক্ত আট আসামি হলেন, মীর আখতার অ্যান্ড পারিসা ট্রেড সিস্টেমের প্রকল্প ব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন, মনজুরুল ইসলাম, প্রকৌশলী আবদুল জলিল, আমিনুর রহমান, আবদুল হাই, মোশাররফ হোসেন, মান নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলী শাহজাহান আলী ও রফিকুল ইসলাম। চার্জশিটে বাদ পড়ে এজাহারভুক্ত সিডিএ’র তিন কর্মকর্তা, ঠিকাদার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিনজন এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মতিনসহ ১২ জন। আদালতসূত্র জানায়, পুলিশের দেওয়া চার্জশিট আমলে নিয়ে ২০১৪ সালের ১৮ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন তৎকালীন মহানগর দায়রা জজ এস এম মজিবুর রহমান।