ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের এবং পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবস্থানরতদের সরিয়ে নিতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল রাত ১০টায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী– উপজেলা ও নগরীর উপকূলীয় এলাকা এবং পাহাড় থেকে ৮০ হাজারের বেশি লোককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে অনেকে নিজেদের পছন্দ মতো আত্মীয় স্বজনদের বাসা–বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়গ্রহণ করেছেন। যাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুছাইন মুহাম্মদ আজাদীকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সরিয়ে নেওয়াদের মধ্যে আলাদা করে নগরীর কতজন, উপকূলীয় উপজেলাগুলোর কতজন বাসিন্দা রয়েছে তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।
তিনি বলেন, জেলার উপকূলীয় এলাকা বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, সন্দ্বীপ, পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলীতে প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে গত শুক্রবার থেকেই চলছে এ তৎপরতা। ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিংসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ পর্যন্ত (গতকাল রাত সাড়ে ১০টা) আমরা পুরো চট্টগ্রামের ৮০ হাজার লোককে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। এর মধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীও রয়েছে।
গত বছর অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে নগরীর পতেঙ্গার আকমল আলী ঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে উন্মুক্ত সাগর তীরে বসবাসকারী কয়েকশ জেলে পরিবার সর্বস্ব হারায়। তাদের ঘর তছনছ হওয়ার পাশাপাশি মাছ ধরার জালও পানিতে ভেসে গিয়েছিল। মোখার প্রভাবে যাতে এমনটা আর না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের নির্দেশনায় জেলেরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়েছেন। তারা তাদের জাল ও মাছ ধরার অন্যান্য সামগ্রী নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছেন। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেছে জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা হুছাইন মুহাম্মদ আজাদীকে বলেন, পতেঙ্গার আকমল আলী ঘাট, হালিশহরের রানী রাসমনি ঘাট ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকার জেলেপল্লীতে ৫ হাজারের মতো লোক বসবাস করেন। মোখার আঘাত থেকে জানমাল রক্ষায় তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মহিলা ও শিশুও রয়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে কিছু পুরুষ সদস্যকে সেখানে রাখা হয়েছে।
গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ভারী বর্ষণের সতর্কবাণী প্রচার করে। এতে বলা হয়, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে শনিবার (গতকাল) সন্ধা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল বিভাগে ভারী (৪৪–৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। এর ফলে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধস হতে পারে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের এনডিসি, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, ভারী বর্ষণ থেকে ভূমি ধসের এই আশংকা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণ হলেই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। অতীতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি সর্বোাচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রবল ঝুঁকিতে থাকা নগরীর আকবর শাহ থানাধীন ফয়’জ লেক সংলগ্ন ঝিল এলাকা থেকে শনিবার (গতকাল) দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দেড় শতাধিক পরিবারকে অপসারণ করা হয়েছে। বাকী যারা আছেন তাদেরকেও নিরাপদে সরে যেতে বলা হচ্ছে। এ কার্যক্রম দেখভালের জন্য জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান নিজেও উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে তিনি বলেছেন, ৮, ৯ ও ১৯ নম্বর সতর্ক সংকেত প্রায় একই। অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আপনাদের এখানে বসাবাস করতে দিতে পারি না। আপনারা নিরাপদে স্বজনদের বাড়ি–ঘরে চলে যান। এছাড়া আপনাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। আপনারা সেখানেও যেতে পারেন। আশ্রয়কেন্দ্রে আপনাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে কাউকে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না বলেও সতর্ক করেন জেলা প্রশাসক।
ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ২৬টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৫৮টি। এসব পাহাড়ের ১৬টি সরকারি ও ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত থেকে লোকজনকে রক্ষায় চট্টগ্রামে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ১ হাজার ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনে ২ হাজার ১০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়কেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি চালসহ পর্যাপ্ত শুকনো খাদ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ওরাল স্যালাইন মজুদ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়।