৮০ ভাগ দোকান গুদামে পানি

৫শ কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার দাবি আর কত বছর পানিতে ভাসবে ভোগ্যপণ্য প্রশ্ন ব্যবসায়ীদের

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আনুমানিক ৫শ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। গত সোমবার রাত ১১টা থেকে চাক্তাই খাল উপচে দোকান ও গুদামে পানি ঢুকতে শুরু করে। কোনো ধরনের ভারী বৃষ্টিপাত ছাড়াই শুধুমাত্র জোয়ারের পানিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ৮০ শতাংশ দোকান ও গুদাম হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। এতে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। জোয়ারের পানির খবরে মধ্যরাতে দোকান-গুদামে ছুটে আসেন ব্যবসায়ীরা। ততক্ষণে অনেকের পণ্য পানিতে তলিয়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাক্তাই খাল চীনের হোয়াংহো নদীর মতো ব্যবসায়ীদের দুঃখে পরিণত হয়েছে। এছাড়া খালের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পলি জমে খাল ভরাট হয়ে যাওয়া এবং তলা পাকা করার কারণে স্থায়ীভাবে নাব্যতা হারিয়েছে চাক্তাই খাল। ফলে চাক্তাই খালে পানির ধারণক্ষমতা কমে গেছে।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চাক্তাই ও রাজখালী খালে জোয়ারের পানি প্রতিরোধে স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজ শুরু করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেই স্লুইচ গেটের কাজ শেষ করতে পারেনি।
জানা গেছে, জোয়ারের পানিতে খাতুনগঞ্জের চান্দমিয়া গলি, ইলিয়াছ মার্কেট, বাদশা মার্কেট, সোনা মিয়া মার্কেট, আমির মার্কেট, নবী মার্কেট, হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার, চাক্তাই মসজিদ গলি, ড্রামপট্টি, চালপট্টি, এজাজ মার্কেট, মধ্যম চাক্তাই, মকবুল সওদাগর রোড, সোবহান সওদাগর রোড ও আছদগঞ্জের নিচু এলাকার বেশিরভাগ দোকান-গুদামে পানি ঢুকেছে। পানিতে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, হলুদ, চাল-ডাল ও বিভিন্ন ধরনের মসলাজাতীয় পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। চাক্তাইয়ের আফরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আলাউদ্দিন বলেন, জোয়ারের পানিতে আমার অনেক টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে। আমরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা করি। এমনিতে বিক্রির অবস্থা খারাপ। এর মধ্যে এমন লোকসান মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।
চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এসএম হারুনুর রশিদ আজাদীকে বলেন, জোয়ারের পানিতে চাক্তাইয়ের অন্তত ৮০ শতাংশ দোকান-গুদামে পানি প্রবেশ করেছে। জোয়ারের পানির সাথে যদি ভারী বৃষ্টি হতো, তাহলে আমাদের কপালে দুঃখ আরো বাড়ত। এর মধ্যে চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ীদের অন্তত শত শত কোটি টাকার মালামাল পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। আজকে স্লুইচ গেটের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে এই অবস্থায় পড়তে হতো না। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি, স্লুইচ গেটের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করা হোক।
সংগঠনের সহসভাপতি ফয়েজ উল্লাহ চৌধুরী বাহাদুর বলেন, আকস্মিক জোয়ারের পানিতে ব্যবসায়ীদের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য সময় আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তর কিংবা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সম্ভাব্য দুর্যোগ সম্পর্কে ইঙ্গিত পেতাম। কিন্তু এবার কোনো কিছু আঁচ করার আগেই পানিতে তলিয়ে যায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো চাক্তাই খালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। তাই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত সোমবার রাত থেকে চাক্তাই খাল উপচে দোকান ও গুদামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে শত শত বস্তা চাল পানিতে তলিয়ে যায়।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পানিতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। খাতুনগঞ্জের জোয়ারের পানির সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চললেও ব্যবসায়ীরা স্থায়ী কোনো সমাধান পাননি। খাতুনগঞ্জে একসময় দেশের শীর্ষ নাম করা কোম্পানির হেড অফিস ছিল। কিন্তু জোয়ারের পানি ও জলাবদ্ধতায় অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া ভোগ্যপণ্যের অনেক বাজার এখন পাহাড়তলী এলাকায় চলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্রমাগত লোকসানের কারণে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ পরিশোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আজকে চার বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সিডিএ জোয়ারের পানি প্রতিরোধক স্লুইচ গেটের কাজ শেষ করতে পারেনি। সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের প্রতি আমাদের প্রশ্ন, ব্যবসায়ীদের ভোগ্যপণ্য আর কত বছর পানিতে ভাসবে?
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, জোয়ারের পানিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। তিনি স্লুইচ গেটের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিসেম্বরে আঘাত হানতে পারে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়
পরবর্তী নিবন্ধতছনছ পতেঙ্গা জেলেপল্লী ৫শ পরিবার এখন অসহায়