করোনার কারণে সাতমাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার পর পহেলা নভেম্বর রোববার থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে গড়ে তোলা কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। দর্শনার্থীদের জন্য পার্ক উন্মুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পর নতুন করে সাজিয়ে-গুছিয়ে তোলা হয়েছে পুরো পার্ককে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘসময় ধরে পার্কের অভ্যন্তরে মানুষের কোনো কোলাহল না থাকায় বিভিন্ন বন্যপ্রাণির বেষ্টনী, সড়কের দুই পাশসহ বিভিন্ন স্থাপনায় কয়েকফুট উচ্চতায় ঝোপঝাড় গজিয়ে উঠেছিল। নতুন করে পার্ক খোলার পরিপত্র জারির খবরে সেই পার্ককে নতুন চেহারায় রূপ দিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। যাতে আগের মতোই দেশি-বিদেশি পর্যটক-দর্শনার্থী মনের আনন্দে পার্ক ভ্রমণ করতে পারে।
এদিকে দীর্ঘ সাতমাসের বেশি সময় পর্যন্ত পার্কের অভ্যন্তরে সকল ধরণের পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমন বন্ধ থাকলেও সাফারি পার্কের ইতিহাসে বিভিন্ন বন্যপ্রাণি ও পশু-পাখির প্রজননে বিরাট সফলতা এসেছে। একনাগাড়ে পার্ক বন্ধ থাকায় জনমানবহীন পার্কে সঙ্গনিরোধকালে অসংখ্য বন্যপ্রাণির প্রজননে এই সফলতা হাতছানি দেয়। বিরল প্রজাতির প্রাণির ঘরেও এসেছে নতুন অতিথি। নতুন করে জন্ম নেওয়া এসব অতিথি পার্কে আগত পর্যটক-দর্শনার্থীদের ভ্রমণে আনন্দের নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সরজমিন পার্কের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বন্যপ্রাণির বেষ্টনী এবং বিশাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেসব বন্যপ্রাণি ও পশু-পাখির বেষ্টনীর আশপাশে ঝোপঝাড় এবং ময়লা-আবর্জনা পড়ে রয়েছিল, সেসব স্থানে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন পার্কের কর্মচারীসহ শ্রমিকেরা।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, পার্কের অভ্যন্তরে তথা বিভিন্ন বন্যপ্রাণির বেষ্টনীর কাছে মানুষের বিচরণ না থাকায় পার্কে থাকা বিভিন্ন বন্যপ্রাণি ও পশু-পাখির ঘর আলোকিত করে এসেছে নতুন অতিথি। তন্মধ্যে বাচ্চা প্রসব করেছে হাতি, বিরল প্রজাতির আফ্রিকান ওয়াইল্ডবিস্ট, জলহস্তি, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণ, মায়া হরিণ, বানর, বিলুপ্ত প্রায় কালিম পাখি, সাধারণ প্রজাতির ময়ূরসহ বিভিন্ন পশু-পাখি। শুধুমাত্র হরেক রকমের পশু-পাখি ও বন্যপ্রাণির চিৎকার-চেঁচামেচিতেই মুখর হয়ে রয়েছে পার্কটি। এতদিন পশু-পাখি ও বন্যপ্রাণির জন্য বর্তমানে নিরাপদ আবাসস্থলে রূপ পেলেও আগামী পহেলা নভেম্বর থেকে ফের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি পর্যটক-দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠবে। পার্কের কর্মচারী আহসান উল্লাহ খন্দকার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘পার্কের চিত্রাহরিণের বেষ্টনীও আমাকে দেখভাল করতে হয়। পহেলা নভেম্বর থেকে পর্যটক-দর্শনার্থীদের জন্য পার্ক খুলে দেওয়া হবে। তাই চিত্রাহরিণের বেষ্টনীর ভেতর এবং আশপাশের সড়কে কয়েকফুট উচ্চতার গজিয়ে উঠা ঝোপঝাড় কেটে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে তোলা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘একনাগাড়ে সাত মাস ১৩ দিন এই পার্ক বন্ধ রয়েছে করোনা সংক্রমণ রোধে। আগামী পহেলা নভেম্বর থেকে পুরোদমে পার্কের অভ্যন্তরে পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমনকে কেন্দ্র করে সবকিছু পরিপাটি করে তোলা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, পার্কে ৫২ প্রজাতির আবদ্ধ এবং উন্মুক্ত পরিবেশের ১২৩ প্রজাতির বন্যপ্রাণি ও পশুপাখি রয়েছে। এরা তৃণভোজী, সরীসৃপ, মাংসাসী ও হরেকপ্রজাতির বন্যপ্রাণি ও পশুপাখি। তন্মধ্যে দীর্ঘসময় পার্ক বন্ধ থাকায় ১৩ প্রজাতির বন্যপ্রাণি ও পশুপাখির নতুন করে প্রজনন হয়েছে।’
এ ব্যাপারে সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় পার্ক বন্ধ থাকায় বন্যপ্রাণি ও পশুপাখির ঘর আলোকিত করে আসা অতিথিগুলো আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করবে আগত পর্যটক-দর্শনার্থীদের। এছাড়াও পুরো পার্ককে নতুন করে সাজানো হয়েছে।’