৭ টাকা কেজি টমেটো তবুও মিলছে না ক্রেতা

সীতাকুণ্ডে হতাশ চাষিরা

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | সোমবার , ২০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে এ মৌসুমে টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা। উপজেলার পাইকারি বাজারগুলোতে ৭৮ টাকা কেজি দরেও টমেটো বিক্রি হচ্ছে। তাও পর্যাপ্ত ক্রেতা মিলছে না। এ অবস্থায় শ্রমিকের মজুরি, বাজারে আনার খরচ, ইজারাদারের মাশুল ইত্যাদির খরচ ওঠানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এতে চরমভাবে হতাশ কৃষকরা।

জানা গেছে, উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়ন থেকে সলিমপুর পর্যন্ত এলাকায় প্রায় ১৬ হাজার চাষি টমেটো চাষ করেন। প্রতি মৌসুমে জানুয়ারিতে চারা রোপণ করে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত টমেটো বিক্রি হয়। ক্ষেতের টমেটো বিক্রি করতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। কারণ বাজারে ন্যায্য দাম মিলছে না। চাষিরা জানান, ক্ষেতে এখনো প্রচুর টমেটো রয়ে গেছে।

কিন্তু বিক্রির জন্য বাজারে এনে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। মাঝেমধ্যে এমন দামে বিক্রি হচ্ছে যে ক্ষেত থেকে বাজারে আনার খরচও উঠছে না। গতকাল পৌর সদরের মোহন্তহাট ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন মৌসুমের সর্বনিম্ন মূল্যে বিক্রি হয়েছে টমেটো। বাজারে আসা চাষিদের একজন উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের বগাচতরের বাসিন্দা ইলিয়াছ হোসেন জানান, গতকাল তিনি দুই ঝাঁকায় প্রায় ৯০ কেজি টমেটো বিক্রি করতে আনেন। কিন্তু বাজারে ক্রেতা কম। ফলে দুই ঝাঁকা টমেটো মাত্র সাড়ে চারশ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। সে হিসেবে প্রতি কেজি টমেটোর দাম পড়েছে ৪ টাকা। অথচ একজন শ্রমিক দিয়ে তিনি টমেটো তুলেছিলেন যার মজুরিই পড়েছে ৪শ টাকা। সৈয়দপুর থেকে টমেটো আনতে খরচ হয়েছে ৮০ টাকা। এছাড়া বাজারের হাসিল, নাশতা প্রভৃতি মিলিয়ে আরো ৩০৪০ টাকা খরচ। এক কথায় টমেটো বিক্রি করে লোকসানে পড়তে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা এমনই অসহায় যে বাজারে ন্যায্য মূল্য না পেলে টমেটো ফেরত নিয়ে যাওয়ারও উপায় নেই। তাহলে সবটাই পচে যাবে। সীতাকুণ্ডে টমেটো সংরক্ষণে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এমন বিপাকে পড়তে হয়েছে। অথচ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে কম দামের সময় টমেটো হিমাগারে রেখে দাম বাড়লে তা বাজারে বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হতে পারত। আমার মতো হাজারো টমেটো চাষি প্রতিবছর এই দুরবস্থায় পড়ছে।

আরেক টমেটো চাষি গুলিয়াখালীর বাসিন্দা আইয়ুব আলী বলেন, আমরা মৌসুমভেদে সবধরনের সবজি চাষ করে থাকি। জানুয়ারিতে টমেটোর চারা লাগিয়েছি ৮০ শতক জমিতে। এই জমি চাষ করতে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু দাম পাচ্ছি না। প্রথম দিকে ১৬ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও হঠাৎই দাম একদম পড়ে গেছে। রোববার দুতিন টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে সাত টাকায় টমেটো বিক্রি হয়েছে। অনেকেই ৩৪ টাকা কেজিতে টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে।

চাষি ইলিয়াস ও আইয়ুব হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়ে বলেন, একটি হিমাগার থাকলে একদিকে কৃষকরা লাভবান হতে পারত, অন্যদিকে সারাবছর টমেটো পাওয়া যেত বাজারে। এখনো মে মাস পর্যন্ত টমেটো বিক্রি হবে। বাজার এ রকম থাকলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।

কৃষকদের এ দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, এখানে কৃষকদের জন্য একটি হিমাগার স্থাপন খুবই জরুরি। সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে এলাকার ২০২৫ হাজার কৃষক উপকৃত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ, আটকা হাজারো পর্যটক
পরবর্তী নিবন্ধআকতার পারভেজকে অনারারি কনসাল করে সন্তুষ্ট মালয়েশিয়া