৭৮.৭ শতাংশ মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট

জরিপ । পিআর বিষয়ে জানে না ৫৬ শতাংশ, ভোট দেয়ার ইচ্ছে ৯৪ শতাংশের

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

দেশের ৭৮ শতাংশের বেশি মানুষ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট বলে একটি জরিপে বলা হয়েছে। বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন কনসাল্টিং এ জরিপ পরিচালনা করেছে। এতে সহযোগিতা করেছে বিআরএআইএন ও ভয়েস ফর রিফর্ম নামে দুটি নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।

গতকাল রোববার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে এক গোলটেবিল আলোচনায় এ জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ইনোভেশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সারওয়ার। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে বিভিন্ন বয়সের ১০ হাজার ৪১৩ জন মানুষের মতামত নেওয়া হয়। দেশের ৬৪ জেলা থেকে তাদের বাছাই করে সরাসরি মতামত নেওয়া হয়। জরিপে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে ধারণা, নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে ধারণা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নির্বাচনের সময় ও ভোটার উপস্থিতিএই ছয় বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের মতামত নেওয়া হয়। খবর বাসসের।

জরিপের ফলাফল তুলে ধরে সভায় বলা হয়, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৮ দশমিক ৭ শতাংশ অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে সরকারের কার্যক্রমকে ‘ভালো’ বলেছেন ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ‘মোটামুটি’ বলেছেন ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ।

জরিপের ফলাফলে বলা হয়, নবীনদের চেয়ে প্রবীণদের মধ্যে সরকারের প্রতি ইতিবাচক ধারণা বেশি। ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সী জেনজি উত্তরদাতাদের মধ্যে সরকারের কার্যক্রমকে ভালো বলেছেন ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী, ২৯ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মিলেনিয়াল উত্তরদাতার মধ্যে সরকারের কার্যক্রমকে ভালো বলেছেন ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ, ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী জেন এঙদের মধ্যে ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ সরকারের কার্যক্রমকে ভালো বলেছেন। ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী বুমারস টুদের ৪৪ শতাংশ, ৭১ থেকে ৭৯ বছর বয়সী বুমারস ওয়ানের ৪৭ দশমিক ১ শতাংশ এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী পোস্ট ওয়ার পালাস উত্তরদাতাদের ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ সরকারের কার্যক্রমকে ভালো বলেছেন।

জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, স্নাতক ডিগ্রিধারী উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩১ দশমিক ২ শতাংশ সরকারের কার্যক্রমকে ভালো বলেছেন। অন্যদিকে কোনো শিক্ষা নেই বা প্রাকপ্রাথমিক উত্তরদাতাদের ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ মনে করেন সরকার ‘ভালো’ কাজ করছে।

জরিপের ফলাফল প্রকাশের পর আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪তম মাসে এসে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের সমর্থন থাকার অর্থই হলো সরকারের কার্যক্রমে জনগণ সন্তষ্ট। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। সারা দেশের মানুষ নির্বাচন চাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক বছর পর ভালো একটা নির্বাচনের দিকে দেশ যাচ্ছে। সরকার প্রধান বারবার বলেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষেরও আশাবাদ, এমন থাকলে কারও সাধ্য নেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার।

বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক বিশেষ সহকারী সাইমুম পারভেজ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশনা ইমাম, ভয়েস ফর রিফর্মের সহআহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর, বিআরএআইএনের নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন প্রমুখ।

পিআর বিষয়ে জানে না ৫৬ শতাংশ মানুষ : বাংলানিউজ জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে একটি জরিপের ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত নন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভোট দিতে যাবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা।

নিরপেক্ষ নির্বাচন ও ভোটার নিরাপত্তা : সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সক্ষম হবে কিনা সে বিষয়ে জনগণ মূলত আত্মবিশ্বাসী, যার ৬৯ দশমিক ৯ শতাংশ ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। একটি অনুরূপ সংখ্যাগরিষ্ঠ (৭৭.৫ শতাংশ) বিশ্বাস করে, তারা নিরাপদে এবং ভয় ছাড়া ভোট দিতে পারবে। পুলিশ ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে সন্দেহ তরুণ, শিক্ষিত এবং শহুরে বাসিন্দাদের মধ্যে বেশি।

আইনশৃঙ্খলা : অধিকাংশ উত্তরদাতা (৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ) মনে করেন, গত ছয় মাসে চাঁদাবাজির পরিস্থিতি বেড়েছে। এ ধারণা শহুরে বাসিন্দা, তরুণ প্রজন্ম এবং উচ্চ শিক্ষা ও আয়ের স্তরের লোকেদের মধ্যে বেশি স্পষ্ট। এ বিষয়ে তথ্যের প্রাথমিক উৎস হলো সামাজিক মাধ্যম, যা একটি উল্লেখযোগ্য অংশের জনসংখ্যার জন্য, বিশেষ করে তরুণ এবং বেশি শিক্ষিত ব্যক্তিদের জন্য।

নির্বাচন সময় ও ভোটদানের অভিপ্রায় : ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা সম্মত হয়েছে, নির্বাচন ফেব্রুয়ারি ২০২৬এ অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত এবং ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে শিক্ষার্থী, শিক্ষিত ব্যক্তি এবং কিছু পেশাজীবী নির্বাচন সময় সম্পর্কে উচ্চতর অসম্মতি এবং ভোট দেওয়ার কম ইচ্ছা দেখিয়েছে।

নির্বাচনী সংস্কার : সংসদের উচ্চ কক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা কম, ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা এ ধারণাটির সঙ্গে অপরিচিত। যারা সচেতন, তাদের মধ্যে এ ব্যবস্থার প্রতি বিরোধিতার চেয়ে বেশি সমর্থন রয়েছে। পিআরের জন্য সচেতনতা এবং সমর্থন তরুণ প্রজন্ম এবং উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআদর্শ সমাজ বিনির্মাণই ইমাম-খতিবদের কাজ
পরবর্তী নিবন্ধআলমাস সিনেমা হলের স্থানে হচ্ছে ১০ তলা ইনডোর স্টেডিয়াম