৬ মাস ধরে মিলছে না বিনামূল্যের ওষুধ কষ্টে গরিব রোগীরা

চমেক হাসপাতাল ক্যান্সার ওয়ার্ড

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২২ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্যান্সার (রেডিওথেরাপি) ওয়ার্ডটি চট্টগ্রামসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ক্যান্সারের চিকিৎসায় একমাত্র ভরসাস্থল। ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পর থেকে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে রেডিওথেরাপি সেবা (মেশিন) রয়েছে কেবল এই হাসপাতালেই। গোটা অঞ্চলে সরকারিবেসরকারি পর্যায়ে দ্বিতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানেই এ মেশিন নেই। মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্র্যাকিথেরাপি সেবাও চালু রয়েছে চমেক হাসপাতালের এ বিভাগে। বেড়েছে ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যাও। এতদিন ২৪টি শয্যা থাকলেও বছর দেড়েক আগে তা বাড়িয়ে ৩৫টি করা হয়েছে। সবমিলিয়ে বেশ ক’বছর ধরে ক্যান্সারের চিকিৎসা সুবিধা বেড়েছে এখানে। তবে ওয়ার্ডে সেবা নিতে আসা গরিবঅসহায় রোগীরা বেশ কিছুদিন ধরে কষ্টে আছেন। ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে সরকারি পর্যায়ে বিনামূল্যের ওষুধ মিলছে না ক্যান্সার ওয়ার্ডে।

স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় গরিব ক্যান্সার রোগীদের বিনামূল্যের এ সব ওষুধ সরবরাহ করা যাচ্ছে না বলে ওয়ার্ড সূত্র নিশ্চিত করেছে। ক্যান্সার ওয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, ক্যান্সারের চিকিৎসায় ওষুধগুলো খুবই ব্যয়বহুল। গরীবের নাগালের বাইরে বলা চলে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে বেশি দামি ওষুধ দেয়া সম্ভব না হলেও বেশ কয়টি (প্রায় দশ) আইটেম ওষুধ (ইনজেকশান) গরিব রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

ওয়ার্ড থেকে সরবরাহ করা ইনজেকশানের মধ্যেডক্সোরোবিসিন (প্রতি ভায়াল দেড় হাজারদুই হাজার টাকা), ইটোপোসাইড (প্রতি ভায়াল ৩০০ টাকা), সিসপ্লাটিন (ভায়াল ৮০০১৫০০ টাকা), ফাইভ এফ ও (ভায়াল ৭৫২০০ টাকা), ভিনক্রিস্টিন (ভায়াল দেড় হাজার টাকা), ডাকার ভাজিন (ভায়াল দেড় হাজার টাকা), মিথোট্রেক্সেট (ভায়াল ৩০০ টাকা) এবং ডসিট্যাক্সিল (ভায়াল ৩ হাজার টাকা)। কিন্তু এসব ইনজেকশানের স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায় ৬ মাসের বেশি সময় ধরে ওয়ার্ডের রোগীদের সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

স্টক না থাকায় ব্যয়বহুল অন্য ওষুধের পাশাপাশি গরীব রোগীদের এসব ওষুধও বাইরের দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেডিওথেরাপি (ক্যান্সার) বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ। আর নতুন করে ওষুধ না পাওয়া পর্যন্ত রোগীদের সরবরাহ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতাল থেকে দেয়া এসব ওষুধ মাঝারি দামের বলা চলে। কিন্তু ক্যান্সার রোগীদের কমন ইনজেকশানগুলোর (যা বেশি দিতে হয়) দাম আরো বেশি। এর মধ্যে প্যাকলিটাক্সিল এর খরচ ৯ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা, ডসিটেক্সিল এর খরচ ৮ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকা, জেমসিটামিন এর খরচ ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা ও কার্বোপ্লাটিন এর খরচ সাড়ে তিন হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার কম নয়।

হাসপাতালের স্টোরের (মেডিসিন) তথ্য অনুযায়ীকেবল ক্যান্সার ওয়ার্ডের (৬নং ওয়ার্ড) জন্যই বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকারও বেশি ওষুধ কেনা হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে একাধিক দফায় ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে এসব ওষুধ কেনা হয়ে থাকে। গত অর্থবছর কেনা ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ায় সরবরাহও বন্ধ রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ক্রয় সংক্রান্ত জটিলতায় নতুন ওষুধ কেনার প্রক্রিয়া দীর্ঘ দিন স্থবির থাকে। যার কারণে নতুন ওষুধ কেনা সম্ভব হয়নি। ফলে ওয়ার্ডেও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ ছিল। যদিও কয়েকটি আইটেমের সরবরাহ ছিল দাবি করে রেডিওথেরাপি (ক্যান্সার) বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মো. ইউসুফ বলেন, ওষুধ ক্রয়ে যে জটিলতা ছিল তা কেটে গেছে। এখন নতুন করে ওষুধ কেনা হলেই রোগীদেরও সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, ক্যান্সার ওয়ার্ডের জন্য গত অর্থবছরে যে ওষুধ কেনা হয়েছিল, তার স্টক শেষ হয়েছে। আর এই মুহুর্তে ওষুধ বাবদ খরচের জন্য আমাদের হাতে বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ শেষ হয়ে গেছে। নতুন অর্থ বছর হিসাবে জুনজুলাইয়ে নতুন করে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে ওষুধ কেনা সম্ভব হবে। আমরা প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ আগিয়ে রাখছি। বরাদ্দ এলেই দ্রুত সময়ে ওষুধ কেনা হবে। আর নতুন ওষুধ কেনা হলে ওয়ার্ডের রোগীরাও পুনরায় বিনামূল্যে এসব ওষুধ পাবেন।

ক্যান্সারের চিকিৎসায় ওষুধপত্রের দাম খুব বেশি উল্লেখ করে চিকিৎসকরা বলছেন, নিন্মবিত্ত মানুষের পক্ষে এ রোগের চিকিৎসা খুব বেশিদিন চালানো কঠিন। অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েন। চিকিৎসা খরচ বহন করতে না পারায় অধিকাংশ গরীব ক্যান্সার রোগীকেই মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয়। ব্যয়বহুল এ রোগের চিকিৎসায় সরকারি পর্যায়ে আরো জোরালো পদক্ষেপ নেয়া জরুরি মন্তব্য করে ক্যান্সার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আলী আসগর চৌধুরী বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসায় এই বিশাল খরচ কমাতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নেই
পরবর্তী নিবন্ধজুন থেকে ৫-১২ বছরের শিশুদের টিকা : স্বাস্থ্যমন্ত্রী