৬ দিন ধরে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রাঙামাটি শহরে

প্রশাসনের বেঁধে দেয়া দামে অসন্তুষ্ট কসাইরা

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | সোমবার , ১৮ মার্চ, ২০২৪ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক ও সহনীয় রাখতে এক সপ্তাহ আগে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তে জেলায় গরুর মাংস খুচরা পর্যায়ে ৭০০ টাকা বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এতেই বাধে বিপত্তি। বৈঠকের পরদিন গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) থেকে গতকাল রোববার (১৭ মার্চ) পর্যন্ত রাঙামাটি জেলা শহরে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন কসাইব্যবসায়ীরা। এতে বিপাকে পড়েছেন মাংস ক্রেতারা। যদিও রমজান উপলক্ষে জেলা শহরের বেশিরভাগ খাবার হোটেলরেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় মাংসের চাহিদা কিছুটা কমেছে। এদিকে কেবলমাত্র জেলা শহরে মাংস বিক্রি বন্ধ থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে গরুর মাংস বিক্রির খবর পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক ও সহনীয় রাখতে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে পুলিশপ্রশাসনের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে গরুর মাংসের কেজি ৬০০৬৫০ টাকায় বিক্রি হলেও রাঙামাটি জেলায় ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপাবাজারও পরিদর্শন করেন জেলাপ্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারসহ বাজার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তবে জেলা প্রশাসনের বৈঠকে সিদ্ধান্তের পরদিন মঙ্গলবার থেকে রাঙামাটি জেলা শহরের বনরূপা, রিজার্ভবাজারসহ অন্যান্য বাজারে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন কসাইব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, ৭০০ টাকায় জেলা শহরের গরুর মাংস বিক্রি করে লাভ হবে না। এই কারণ দেখিয়েই গত ছয়দিন ধরে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে না রাঙামাটির বাজারগুলোতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশিরভাগ গরুই আনা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে। বিশেষত লংগদু উপজেলা থেকে। নৌপথে গরু পরিবহনের কারণে পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেশি পড়ে। এতে করে ৭৫০৮০০ টাকার নিচে কসাই ও ব্যবসায়ীদের গরুর মাংস বিক্রির সুযোগ কম।

মাংস বিক্রি বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা শহরের রিজার্ভবাজার এলাকার গরুর মাংস বিক্রেতা মো. হারুন সওদাগর বলেন, ‘বেশি দামে গরু কিনে লোকসানে মাংস বিক্রি সম্ভব নয়। প্রশাসন গরুর মাংসের যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই দামে বিক্রি করলে আমাদের অনেক লোকসান হবে। তবুও আমরা প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রির অনুমতি চেয়েছিলাম।’ বনরূপা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. জাফর বলেন, ‘পাহাড়ি এলাকা থেকে গরু কিনেও লংগদুর মাইনীমুখ বাজারে প্রতি গরুর জন্য দেড় হাজার টাকা ইজারার হাসিল ও পথে বিভিন্ন গ্রুপকে চাঁদা দিয়ে রাঙামাটি শহরে আনতে হয়। ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তাই কসাইরা প্রশাসনের বেধে দেয়া দামে অসন্তুষ্ট বিধায় মাংস বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি পৌরসভার বাজার পরিদর্শক কামাল তালুকদার গত মঙ্গলবার থেকে রাঙামাটি শহরে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কী কারণে কসাইরা গরুর মাংস বিক্রি করছেন না সে ব্যাপারে তিনি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জানতে চাইলে রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘সরকারের নির্ধারণ করে দেয়া মূল্যে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৬৬৪ টাকায় বিক্রি করতে বলা হয়েছে। তবুও রাঙামাটির বাস্তবতায় আমরা বিষয়টি বিবেচনা করে ৭০০ টাকায় বিক্রির জন্য বলেছি। জেলার অন্যান্য উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলাতেও সরকার নির্ধারিত দামে গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে কেবলমাত্র রাঙামাটি সদরের ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের জিম্মি করে ৭৫০৮০০ টাকায় বিক্রি করতে চাইছে। ব্যবসায়ীদের না পোষালে তো খুব বেশি কিছু করার সুযোগ নেই। গরুর মাংস তো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসও না যে প্রতিদিন কিনতে হবে, খেতেই হবে। তারা এভাবে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করলে মানুষ ক’দিন পরে নিজেরাই পাড়াএলাকায় গরু জবাই করে ভাগাভাগি করে নেবেন।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমি হারলে রক্তবন্যা বইবে, ভেঙে যাবে আমেরিকার গণতন্ত্র!
পরবর্তী নিবন্ধজগন্নাথ শিক্ষার্থীদের একগুচ্ছ দাবি, ৭ দিনের আলটিমেটাম