৬৮ দিনেও জমা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন

ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশন জালিয়াতি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে জেএসসি অকৃতকার্য ৩৫ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশন জালিয়াতির ঘটনায় ৬৮ দিনেও (দুই মাস ৮ দিন) তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে জেএসসি অকৃতকার্য প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে অধিকাংশই ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য ফরমপূরণও সম্পন্ন করে। যদিও শিক্ষাবোর্ডের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় জেএসসি ফেল করা কোনো শিক্ষার্থীর ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ নেই। শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় শাখার তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীদের এ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। এবারের (২০২১ সালের) এসএসসিতে কেবল তিন বিষয়ে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাকি বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিং ও জেএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার কারণে ফরম পূরণ সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের জেএসসির ফল যাচাই প্রক্রিয়ায় যেতে হয়েছে শিক্ষাবোর্ডকে। এতেই ধরা পড়ে জেএসসি পাশ না করেও এসএসসির ফরম পূরণের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক এ কমিটির আহ্বায়ক। আর উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. আবুল বাশার ও উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) নারায়ণ নাথ এ কমিটির সদস্য। বোর্ডের সচিব প্রফেসর আব্দুল আলীমের স্বাক্ষরে গত ১০ অক্টোবর এ কমিটি গঠন করা হয়। তবে ৬৮ দিন পার হলেও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি।
জানতে চাইলে পরীক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন ও কমিটির বাকি দুই সদস্যের অফিশিয়াল ব্যস্ততার কারণে এখনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেন নি বলে দাবি করেছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক। তবে তদন্তের কাজ শেষ করতে কাজ করছেন জানিয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানের কাছ থেকে বিদ্যালয় শাখা ব্যাখ্যা তলব করেছিল। তারা ব্যাখা দিয়েছে। বিদ্যালয় শাখা সেগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। অনেকের সাক্ষ্য নিতে হচ্ছে। আমরা কাজ করছি।
প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় গত ১৩ নভেম্বর দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশন জালিয়াতি/জেএসসি পাস না করেও ৩৫ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর এসএসসির ফরম পূরণ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদনে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষাবোর্ড ও স্কুল সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদের ডাটা ইনপুট দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ফিল্টারিং সিস্টেমের কারণে জেএসসি অনুত্তীর্ণ কোনো শিক্ষার্থীর ডাটা সফটওয়্যার গ্রহণ করে না। যার ফলে জালিয়াতি ছাড়া জেএসসি ফেল করা এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্নের সুযোগ নেই। আর এই জালিয়াতির নেপথ্যে স্কুল শিক্ষক ও বোর্ড কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বড় ধরণের চক্র জড়িত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশনে জালিয়াতির মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় তদন্ত কার্যক্রমে ঢিলেমিতে ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ দেখছেন শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এর আগে এক সাথে এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন জালিয়াতির তথ্য পাওয়া যায়নি শিক্ষাবোর্ডে। এরকম একটি স্পর্শকাতর জালিয়াতির ঘটনা দ্রুত তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে বোর্ড কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। যার কারণে প্রায় আড়াই মাসেও এ ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি। এ নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম ঘিরেও প্রশ্ন উঠেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত এক, আহত অপর ভাই
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার