৬৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী | শনিবার , ৪ মে, ২০২৪ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

দেশে গত ৬৩ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করে চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে গত ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৫৮ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। যা বিগত বছরের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। এখনো লবণ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। এর আগে ২০২২২৩ অর্থবছরে ৬২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছিল। সে সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড ছিলো ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ টন।

সংস্থাটি জানায়, চলতি লবণ মৌসুমে লবণ চাষকৃত মোট জমির পরিমাণ ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর। গত বছর ছিল ৬৬ হাজার ৪২৪ একর। গত বছরের তুলনায় এ বছর লবণ চাষের জমি বৃদ্ধি পেয়েছে ১ হাজার ৯৩৩ একর। চলতি লবণ মৌসুমে লবণ চাষির সংখ্যা ৪০ হাজার ৬৯৫ জন, যা গত বছর ছিল ৩৯ হাজার ৪৬৭ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর লবণ চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ হাজার ২২৮ জন। বর্তমানে লবণ মাঠ পর্যায়ে মণপ্রতি ক্রুড লবণের গড় মূল্য ৩১২ টাকা, যা গত বছর ছিলো ৪২০ টাকা।

দেশের সর্ব বৃহত্তম লবণ উৎপাদন জোন কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, মহেশখালী, চকরিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, পেকুয়া। অন্যদিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ৬৬ হাজার ৪ শত ২৪ একর জমিতে এবার লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। এসব মাঠে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমের গত ৪ মাসে তথা ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছে ২২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬৫৮ মেট্রিক টন। যা গত বছরের এই তারিখ পর্যন্ত উৎপাদন ছিল ১৯ লক্ষ ১৭ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন। এখন প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায়। চলতি বছর দেশে লবণের জাতীয় চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন।

বাংলাদেশ লবণ চাষী পরিষদের সভাপতি ও সল্ট মনিটরিং গ্রুপের সদস্য সাজেদুল করিম বলেন, গত ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের আপডেট খবর হচ্ছে বিগত বছরের লবণ উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ২২. ৩৩ লক্ষ মে. টন। আজ তা অতিক্রম করে নতুন উৎপাদন রেকর্ড রয়েছে ২২. ৩৪ লক্ষ মে.টন। শিল্প সচিবের নির্দেশনায় বিসিক চেয়ারম্যানের নিয়মিত মনিটরিং ও বাংলাদেশের সকল প্রান্তিক লবণ চাষীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। লবণ উৎপাদন চলমান রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আমরা প্রতিদিন লবণ উৎপাদন মনিটরিং করে থাকি। ২৮ এপ্রিল তারিখে সারাদেশে লবণ উৎপাদন হয়েছে ৩৮ হাজার ৩ শত ৭০ মে. টন। যা গত বছর এই তারিখে উৎপাদন হয়েছিল ৩০ হাজার ৮ শত ৯৫ মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন বেশি হলেও চাষী পর্যায়ে ক্রুড লবণের গড় মূল্য হচ্ছে ৩১২ টাকা। যা গতবছর ছিল ৪২০ টাকা। লবণ চাষীরা তীব্র গরমে রোদে পুড়ে এই ফসল উৎপাদন করলেও কাঙ্খিত মূল্য পাচ্ছেন না।

কঙবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবং অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় লবণের দাম পতনের দিকে রয়েছে। তবে শীঘ্রই লবণের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের রাজুয়ার ঘোনা গ্রামের লবণ চাষী মোহাম্মদ আলম বলেন, গত ২০ দিন ধরে তীব্র তাপ প্রবাহে লবণ উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সকালে দেওয়া পানিতে বিকেলেই হচ্ছে লবণ। লবণ মৌসুমের শেষের দিকে এসে ভালো উৎপাদন হচ্ছে। গত ২ মে আকস্মিক কালবৈশাখী সহ সামান্য বৃষ্টি হলেও লবণ চাষ বন্ধ হয়নি। ভারি বৃষ্টিপাত না হলে এবং এ অবস্থা আগামী ২০ দিন অব্যাহত থাকলে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। অপরদিকে

উৎপাদন বেশি হলেও লবণের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে দাম কমলেও লবণ চাষীরা উৎপাদন বেশি হওয়ায় খুশি।

মহেশখালী উপজেলার কালার মার ছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা লবণ ঘোনায় সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় লবণ পরিবহন শ্রমিক আবুল কাশেমের সাথে। তিনি বলেন, তীব্র রোদে লবণ উৎপাদন বেশি হওয়ায় আমরাও লবণ পরিবহন করে মজুরি বেশি পাচ্ছি। আগে যেখানে দৈনিক ১০০০ টাকা পেতাম, এখন সেখানে ১৫/১৬ শত টাকা আয় হচ্ছে। অনেক শ্রমিক দৈনিক ২০০০ টাকাও মজুরি পাচ্ছে।

লবণ ব্যবসায়ী মো. সরওয়ার আলম বলেন, তীব্র গরমে মানুষ অসহ্য হলেও লবণ চাষীদের জন্য তা আশীর্বাদ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। লবণ চাষীরা উৎপাদন বাড়াতে অসহ্য গরমেও কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি লবণের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকই এলাকার সব জায়গায় বৃষ্টি হয় না কেন
পরবর্তী নিবন্ধপার্লার থেকে পালালেন কনে, বিয়ের আসর পণ্ড