১৯৬০ সালে আমার তখন জন্ম হয়নি বাবার কাছে শুনেছি কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এ এলাকায় ছোট ছোট কয়েকটি দ্বীপের সৃষ্টি হয়। এই দ্বীপগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুরানবস্তী-ঝুলিক্যা পাহাড়। এই পুরানবস্তী দ্বীপে আমার জন্ম এবং বেড়ে উঠা। ৬১ বছর পর যে আমরা পুরানবস্তী-ঝুলিক্যা পাহাড় এলাকাবাসী যে একটি ব্রিজ পেলাম তাতে আমরা অনেক খুশি। এই প্রতিবেদকের কাছে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসব কথাগুলো বলছিলেন রাঙামাটির পৌর এলাকার পুরানবস্তীর মো: হারুন।
সেতুটি সরেজমিনে পরর্দিশনকালে দেখা যায়,কাপ্তাই হ্রদের মাঝখানে নির্মিত সেতুটির উভয়পাশ অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত। বিল্ডিংয়ের উপর থেকে তাকালে ব্রিজটি দেখতে ইংরেজি অক্ষর ণ এর মতো দেখতে। কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশির উপর নির্মিত এ সেতুটি ভবিষ্যতে পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত দর্শনীয় স্থান হিসেবেও পরিচিতি লাভ করবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাঙামাটি সফরে এসে ৯ টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এই ৯ প্রকল্পের একটি প্রকল্প ছিল রিজার্ভ বাজার-পুরানবস্তী-ঝুলিক্যা পাহাড় সংযোগ সেতু। উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পুরানবস্তী এলাকায় ৩১০ পরিবার এবং ঝুলিক্যা পাহাড় এলাকায় ১৯০ পরিবার আছে।দুই এলাকায় প্রায় তিনহাজার মানুষের বসবাস। ব্রিজটি নির্মাণের ফলে পৌর এলাকার রিজার্ভ বাজার-পুরানবস্তী-ঝুলিক্যা পাহাড় সংযোগ হয়েছে। এর ফলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা সুবিধাসহ সহজতর হয়েছে।
পুরানবস্তী এলাকার মো: রাকিব বলেন, এখানে ব্রিজ হওয়ায় আমাদের অনেক সুবিধা হবে। ব্রিজটি যখন ছিল না তখন আমাদের লেক পার হতে অনেক সময় নষ্ট হতো, কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় লাগত। এখন আমরা মুহূর্তের মধ্যেই চলে যেতে পারছি। এমনকি অসুস্থ রোগীও অল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। ব্রিজটি হওয়ায় পুরানবস্তী এলাকার মানুষ অনেক খুশি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
ঝুলিক্যা পাহাড় এলাকার মো: আব্দুল মান্নান বলেন, পুরানপাড়া এবং ঝুলিক্যা পাহাড়ের মধ্যে যে ব্রিজটি নির্মিত হয়েছে তার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, এ এলাকায় প্রায় তিন-চার হাজার মানুষের বসবাস। ব্রিজটি হওয়ায় আমাদের যে কি সুবিধা হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। ব্রিজটি হওয়ার ফলে শিক্ষা, চিকিৎসা, যাতায়াত মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নতি হয়েছে। ব্রিজটি হওয়ার আগে আমরা এলাকাবাসী যথাসময়ে কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতাম না। নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত বোটের জন্য বসে থাকতে হতো। বিশেষ করে রাতের বেলায় সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো।
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক মো: মঈনউদ্দিন সেলিম বলেন, রিজার্ভ বাজার -পুরানবস্তী-ঝুলিক্যা পাহাড় সংযোগ সেতু এটি এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এখানে দুই থেকে তিন হাজার লোক পানিবন্দি ছিল। তিনি বলেন, মূলত এটি একটি দ্বীপ ছিল। বিশেষ করে রাতের বেলায় পুরানবস্তী মানুষের সীমাহীন কষ্ট করতে হতো। এখানকার বাসিন্দাদের স্কুল কলেজ, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা এ সংযোগ সেতু করে দেয়ায় এ এলাকার মানুষ অনেক লাভবান হয়েছে। পাশাপাশি এ ব্রিজটির মাধ্যমে পর্যটন সম্ভাবনা বেড়ে গেছে অনেকটা। দুই দ্বীপের এবং রাঙামাটির মানুষের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে।
সেতুটির সংযোগ সড়কের ঠিকাদার মো: ছলিম উল্লাহ সেলিম বলেন, আমি চেষ্টা করছি অতি অল্প সময়ের মধ্যে কাজের গুণগত মান ঠিক রেখে কাজ শেষ করতে। আশা করছি শেষ করতে পারবো।
এ প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমা বলেন, পুরানবস্তী- ঝুলিক্যা পাহাড় সংযোগ সেতুটি ১৭ কোটি ৬৩ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। এটির দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৩৮৪.০৮ মিটার বা ১২৫০ ফুট এবং প্রস্থ হচ্ছে ৪.৫০ মিটার বা ১৫ ফুট। আগামী ২০২২ সালের জুন মাসে ব্রিজটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, ঝুলিক্যা পাহাড় এবং পুরানবস্তী এলাকার মানুষগুলো ব্রীজ না থাকার ফলে পৌর এলাকার কাছে থেকেও অনেকটা দূরে ছিল। তাদেরকে শিক্ষা, চিকিৎসা এবং যাতায়াতের সুবিধা দেয়ার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এ প্রকল্পটি গ্রহণ করে। নিখিল কুমার চাকমা বলেন, ব্রিজটির মাধ্যমে রাঙামাটির পুরানবস্তী-ঝুলিক্যা পাহাড় এলাকার প্রায় ৪ হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত আশাপূরণ হবে এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাইল ফলক উন্মোচিত হবে। তিনি বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যে ব্রিজের কাজ শেষ হলে ব্রিজটি উদ্বোধনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।