৬ষ্ঠ জোন বাস্তবায়ন জাপানের সাথে পিপিপির মাধ্যমে

ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প ব্যয় হবে ৩ হাজার কোটি টাকা সরকারি ক্রয় কমিটিতে নীতিগত অনুমোদন

আজাদী প্রতিরেদন | রবিবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২২ at ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট-৬ (৬ষ্ঠ জোনের কাজ) বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) মডেলের আওতায়। জাপানের মারুবিরি কোম্পানির অর্থ সহায়তায় পিপিপির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) বৈঠকের পর পিপিপির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে আইনি জটিলতা কেটে যাওয়ায় স্যুয়ারেজ (পয়ঃনিষ্কাশন) প্রকল্পের ক্যাচমেন্ট-১ (প্রথম জোনের) এর কাজ শুরু হয়েছে। ক্যাচমেন্টে-১ এর উত্তর ও পশ্চিমে ক্যাচমেট-৫ ও ক্যাচমেন্ট-৬ হওয়ায় হালিশহর ১৬৩ একর ভূমির উপর আরও দুটি ক্যাচমেন্ট পরিশোধনগার স্থাপনের চিন্তা করছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। পিপিপির আওতায় ক্যাচমেন্ট-৬-এর কাজ শুরু হবে কাস্টমস মোড় থেকে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও স্যুয়ারেজের প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, নগরীতে স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি ছয়টি জোনে ভাগ হয়ে চলবে। এখন ক্যাচমেন্ট-১ এর কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০৩৫ সালের মধ্যে পুরো নগরকে স্যানিটেশন ব্যবস্থায় আনা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যাচমেন্ট-১ এর কাজ শেষ হলে ২০ লাখ গ্রাহক এর সুবিধাভোগী হবেন। এর মধ্যে ১০ লাখ এসটিপি (সরাসরি পাইপলাইন) এবং ১০ লাখ ফিকেল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্টের (বর্জ্য সংগ্রহ) আওতায় আসবে। এর মধ্যে এসটিপি দৈনিক ১০ কোটি লিটার এবং এফএসটিপিতে ৩০০ টন পানি পরিশোধন করা সম্ভব হবে।

তিনি জানান, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ক্যাচমেন্ট-৬ বাস্তবায়ন হবে। এতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। জাপানের মারুবিনি কোম্পানি এটাতে অর্থায়ন করবে। ইতোমধ্যে এই ব্যাপারে অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) বৈঠকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন প্রকল্পটি নিয়ে বিস্তারিত সমীক্ষা চলবে। তারপর পিপিপি চুক্ত হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি দুই ধাপে কাজ করবে। এর মধ্যে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের আওতায় (এসটিপি) রান্নাঘর, গোসলের পানি সংগ্রহ করা হবে এবং অন্যটি ফিকেল স্ল্যাজ কালেকশন (এফএসটিপির) আওতায় টয়লেটের বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের বাসায় স্যুয়ারেজের পাইপলাইন বসানো হবে। ওই পাইপলাইনের সহায়তায় গৃহস্থালি ও গোসলের ব্যবহার করা পানি সরাসরি ক্যাচমেন্ট এরিয়ার পরিশোধনাগারে চলে যাবে। সেখানে এসব পানি পরিশোধিত হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়বে। বাসা-বাড়ির বর্জ্য ও পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিশোধনাগার হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়বে। ফলে নগরের কোনো সেপটিক ট্যাংকের প্রয়োজন পড়বে না। এ ক্ষেত্রে নগরের ছয়টি ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় পানি পরিশোধনাগার বসানো হবে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, কারিগরি যাচাই-বাছাইয়ের সময় দেখা যায়, নগরের কিছু অলি-গলি ছোট ও সরু হওয়ায় ৩০ এলাকায় স্যুয়ারেজের পাইপলাইন স্থাপনের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে ফিকেল স্ল্যাজ কালেকশনের আওতায় টয়লেটের বর্জ্যসমূহ ভ্যাকুয়াম ট্রাক ও গাড়িতে করে পরিশোধনাগারে নেয়া হবে। সেখানে পরিশোধনের পর নদী ও সাগরে গিয়ে মিশবে। এছাড়া প্রকল্পের স্বার্থে নগরের বস্তি এলাকার অস্বাস্থ্যকর টয়লেটগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা হবে। স্যুয়ারেজ লাইনের সংযোগের ফলে বৃষ্টি ছাড়া ওই এলাকায় ড্রেনে কোনো পানি থাকবে না।
হালিশহরের ১৬৩ একর ভূমিতে ক্যাচমেন্ট-১ এর পরিশোধনাগার এরিয়া হিসেবে ধরা হয়েছে। মালয়েশিয়ার কারিগরি প্রতিষ্ঠান জেবিও এরিনকো ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় মাঠ পর্যায়ের কার্যাদেশ পায়। এই ক্যাচমেন্ট এরিয়াকে তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে দুটি চীনা ও কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ক্যাচমেন্ট-২ (কালুরঘাট) এরিয়া ও ক্যাচমেট-৪ (পূর্ব বাকলিয়া) অংশের কারিগরি দিক নিয়ে কাজ করছে জাইকা। তিনটি প্যাকেজের মধ্যে নেটওয়ার্কিংয়ের কাজ যৌথভাবে বাংলাদেশ ও চীন এবং আরেকটি কাজ করছে চীনের প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে কোরিয়ার এঙ্মি ব্যাংকের অর্থায়নে ক্যাচমেট-৩ (ফতেয়াবাদ) এরিয়ায় কারিগরি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের কাজ চলছে। ক্যাচমেট-৫ (উত্তর কাট্টলী) এফডিএর মাধ্যমে কারিগরি সহায়তার কাজ করছে। এরপর প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হবে। একনেকের অনুমোদন পেলে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এই ক্যাচমেন্ট প্রকল্পের দরপত্র নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিমানের সিটের নিচে মিলল ৫৬ স্বর্ণের বার
পরবর্তী নিবন্ধসরকার রিজার্ভ থেকে এক পয়সাও নষ্ট করে না : প্রধানমন্ত্রী