প্লাস্টিক–পলিথিন বর্জনের মাধ্যমে নগরের জলাবদ্ধতা কমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, প্লাস্টিক–পলিথিনের কারণে শহরের বিভিন্ন খাল–নালায় পানি জমে থাকে। কৃষি খাল, চাক্তাই, বির্জা খালে আমি প্রচুর প্লাস্টিক পলিথিন দেখেছি। এই জায়গায় আমাদের সচেতন হতে হবে। গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্লাস্টিক–পলিথিন যদি আমরা বর্জন করতে পারি তাহলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী একটা সলিউশন আমরা পাব। আমরা যদি প্লাস্টিক ব্যবহার না করি, শহরকে প্লাস্টিক মুক্ত রাখতে পারি তাহলে একটি সুন্দর ইকো–ফ্রেন্ডলি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।
তিনি গতকাল সোমবার নগরের প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’ প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এক বছরের মেয়াদী এ পাইলট প্রকল্প চালু করে। উদ্বোধনী দিনে ৫০০–এর বেশি স্থানীয় প্রান্তিক পরিবার প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার করার সুযোগ পেয়েছেন। এদিন ৫ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়। ডা. শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রাম শহরের মূল সমস্যা জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর ১৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এটার কাজ ২০২৬ সালে শেষ হবে। খাল খননের পাশাপাশি প্লাস্টিক–পলিথিনকে আমাদের না বলতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে যে প্লাস্টিকের বিপরীতে বাজার পাওয়া যাচ্ছে সেটা বিশাল ব্যাপার। এই প্লাস্টিকগুলো রিসাইকেল পরবর্তীতে এনার্জি বা প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার করা হবে। এভাবে রিসাইক্লিং করা গেলে আমরা হয়তো পলিথিন বা প্লাস্টিকমুক্ত চট্টগ্রাম দেখতে পারব। এসময় প্লাস্টিকের পাশাপাশি ককশীটও এভয়ড করার আহবান জানান মেয়র।
শাহাদাত বলেন, আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্লাস্টিকের পানির বোতল বা মিনারেল ওয়াটারের পরিবর্তে জগ বা কাঁচের গ্লাস ব্যবহার করতে পারি। এর মাধ্যমেও আস্তে আস্তে প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক কমানো যাবে। কাগজের প্যাকেটে যেভাবে জুস দেয়া হয় সেভাবে কাগজের প্যাকেটে যদি পানি দেয়া হয় তাহলেও মিনারেল ওয়াটারের প্লাস্টিক বোতল ব্যবহারও কমে যাবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে এলে কমবে প্লাস্টিক দূষণও।
মেয়র ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’ প্রকল্পকে পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার আন্দোলন আখ্যা দিয়ে বিদ্যানন্দ ফাইন্ডেশনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রোগ্রাম প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে করা যেতে পারে। রাজনৈতিক দলও এমন উদ্যোগ নিতে পারে। সবাই এগিয়ে আসলে শহরকে প্লস্টিক দূষণ থেকে রক্ষা করা যাবে।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমি পলিথিন–প্লাস্টিকের দূষণমুক্ত চট্টগ্রাম গড়তে চাই। আজকের এই অভিনব প্রকল্প এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, যে কোনো সমস্যা সমাধানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নদীমাতৃক এই দেশের প্রাণপ্রবাহ রক্ষা করা এবং প্লাস্টিক দূষণে বিপন্ন প্রাণীকুলকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। এই পৃথিবীকে দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য রাখতে সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। চট্টগ্রামকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষা করতে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিদ্যানন্দের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা এতই ব্যাপক যে এটি সরকারের একার পক্ষে রোধ করা অসম্ভব। এই দূষণ কমাতে ব্যাপক জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা প্রয়োজন। তাই মানুষকে সম্পৃক্ত করতেই আমরা সারাদেশে প্লাস্টিক এঙচেঞ্জ স্টোর চালু করছি। এ বিষয়ে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। আশা করছি, এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে ধারণা দিতে পারব এবং প্লাস্টিক দূষণ রোধ ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারের যে বিপুল ব্যয় হয়, তা আমাদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কিছুটা হলেও কমাতে পারব।
এদিকে উদ্বোধনের পর প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার কিনতে দেখা গেছে প্রান্তিক লোকজনদের। তারা প্লস্টিকের বিনিময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার করতে পেরে উচ্ছ্বাস করেন। এক কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে ১ কেজি চাল, ১ কেজি লবণ, ১টি টি–শার্ট, ৬টি ডিম, ১ প্যাকেট বিস্কুট, ৪টি নুডুলস–এর যে কোনো একটি কিনতে পারা গেছে। একইভাবে ২ কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে ১ কেজি মসুর ডাল বা ১ কেজি ছোলা কিনতে পারেন লোকজন। এছাড়া ৩ কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে ২ কেজি আটা, ১ কেজি চিনি এর যে কোনো একটি এবং ৪ কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে ১ লিটার সয়াবিন, ১টি মাছ অথবা ১টি মুরগী’র যে কোনো একটি নিতে পেরে খুশি লোকজন।
উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা ও হালিশহরে ২টি স্থায়ী স্টোর চালু থাকবে। এসব সেন্টারে যে কেউ পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিলে পাবেন বাজার করার সুযোগ। এছাড়া ৫০টি ভ্রাম্যমাণ বাজার ক্যাম্প করা হবে। সেখানেও প্লাস্টিক জমা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে পারবেন। প্লস্টিক সংগ্রহে স্থাপিত সেন্টারগুলো থেকে চাল, ডাল, মাছ, মুরগী, ডিমি, তেল, চিনি ও লবণসহ ২২ ধরনের নিত্যপণ্য সংগ্রহ করা যাবে প্লস্টিকের বিনিময়ে। নেয়া যাবে শিক্ষা সামগ্রী, কাপড়, স্যানিটারি প্যাডও।