৫ মিনিটের পথ যেতে ৪ ঘণ্টা!

কাপ্তাই লেকে কচুরিপানার জট

কাপ্তাই প্রতিনিধি | রবিবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ

বিশাল কাপ্তাই লেকে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে কচুরিপানা। পুরো লেক জুড়ে কচুরিপানা আর কচুরিপানা। এর জন্য লেকে চালানো যাচ্ছে না ইঞ্জিন চালিত বোট। কচুরিপানা জটে নৌকা পথে আগে যে পথ পাড়ি দিতে ৫ মিনিট সময় লাগতো এখন সেই একই পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে পাকা ৪ ঘণ্টা! এতে থমকে গেছে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা।

কাপ্তাই জেটি ঘাটের অপর প্রান্তে জেলে পাড়ার বাসিন্দা হিমেন্দ্র নাথ জলদাশ বলেন, কাপ্তাই জেটিঘাটের একেবারে কাছেই আমাদের জেলে পাড়া। কচুরিপানার জটের কারণে বেশি ভুগতে হচ্ছে আমাদের। নৌকায় চড়ে জেটিঘাট থেকে জেলে পাড়ায় যেতে সময় লাগে মাত্র ৫ মিনিট। সেই একই পথ পাড়ি দিতে এখন লাগছে ৪ ঘণ্টা। আবার কচুরিপানার জট ঠেলে চলাচল করতে গিয়ে অনেক সময় ইঞ্জিন চালিত নৌকার ফ্যানের পাখা ভেঙে যায়। এতে আমরা অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখেও পড়ছি।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, কাপ্তাই জেটিঘাটে জমে আছে পাহাড় সমান কচুরিপানার স্তূপ। কচুরিপানা এমনভাবে ঠেসে আছে যে এগুলো ঠেলে কোনো ইঞ্জিন নৌকা এক ইঞ্চিও সামনে এগুতে পারছে না। জেটিঘাটের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের মাছ আহরণ পন্টুন। তালিকাভুক্ত জেলেরা কাপ্তাই লেকের দূরদূরান্ত থেকে মাছ ধরে পন্টুনে এনে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিক্রি করে। কিন্তু কচুরিপানার চাপে ইঞ্জিন বোট ঘাট থেকে যেমন সহজে বের হতে পারছে না তেমনি কোনো বোট সহজে ঘাটে ভিড়তেও পারছে না। কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জেনারেটরের মুখে কচুরিপানা জমে থাকছে। এর ফলে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত কচুরিপানা পরিষ্কার করা হচ্ছে। তারপরও উজান থেকে কচুরিপানা নেমে আসছে। শুধু কাপ্তাইয়ে নয় রাঙামাটি জেলার লেক সংলগ্ন ৬টি উপজেলাতেও একই সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

জেটিঘাট বোট মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইব্রাহিম জানান, বিগত জুলাই মাস পর্যন্ত লেকে পর্যাপ্ত পানি ছিল না। যে কারণে পানির অভাবে আমরা বোট চালাতে পারতাম না। এখন লেক ভর্তি পানি। কিন্তু কচুরিপানার কারণে আমরা স্বাভাবিকভাবে বোট চালাতে পারছি না। তিনি বলেন, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, লংগদুসহ প্রায় প্রতিটি উপজেলায় নৌপথে যাতায়াতে কচুরিপানা চরম বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছে। এই কচুরিপানা পরিষ্কার করার দায়িত্ব কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের কচুরিপানার বিড়ম্বনার কথা স্বীকার করে বলেন, কচুরিপানার জন্য আমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সারা লেকের সব কচুরিপানা এসে জমা হচ্ছে কাপ্তাইয়ে। নিয়মিতই পরিষ্কার করা হচ্ছে তবুও রেহায় মিলছে না এ বিড়ম্বনা থেকে। তিনি বলেন, শুধু কাপ্তাইয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার করে সুফল পাওয়া যাবে না। পুরো লেকজুড়ে যে অবস্থা যেখানে যত কচুরিপানা রয়েছে সব একযোগে পরিষ্কার করতে হবে। আর এর জন্য বড় প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যাপারে রাঙামাটির সংসদ সদস্য উদ্যোগ নিয়ে সরকারিভাবে কাজটি করতে পারেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি কচুরিপানার জন্য মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি অবগত আছেন জানিয়ে বলেন, সর্বস্তরের জনগণের সুবিধার্থে এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাহাড়ে বিপন্ন প্রাণীর দেখা
পরবর্তী নিবন্ধমানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এখনই পদত্যাগ করুন : ফখরুল