ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে বাড়ছে দুর্ঘটনা। উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই মহাসড়কের পাশে হওয়ায় চলাচলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধে নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন সময় কর্মসূচি পালন করলেও সড়কগুলো আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
মহাসড়কের এই অংশে দুর্ঘটনার বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। এসবের মধ্যে আছে ট্রাফিক আইন অমান্য করে মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক (অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহকারীর হাতে গাড়ি থাকা), নিয়ম ভঙ্গ করে ওভার লোডিং, ওভারটেকিংয়ের প্রবণতা, চালকদের দীর্ঘক্ষণ বিরামহীন গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, উল্টোপথে গাড়ি চালানো, সংযোগ সড়ক থেকে দ্রুতগতিতে মহাসড়কে ওঠা, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও চলাচলের অনুপযোগী সড়ক অন্যতম। এছাড়া সময় বাঁচাতে পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা ও ঝুঁকি নিয়ে দ্রুত মহাসড়ক পারাপার করতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। মহাসড়কে যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ে যত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, তার ৬০ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণভাবে সড়ক পার হতে গিয়ে। পথচারী ও সাধারণ মানুষ সড়ক পারাপারে একটু সতর্ক হলেই অনেক প্রাণ বেঁচে যাবে।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যানুসারে জানা গেছে, চলতি বছরের পাঁচ মাসে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে ছোট–বড় ৩২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় পথচারী, চালক ও চালকের সহকারীসহ ২৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে এবং আহত হয়েছে শতাধিক। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সিএনজিচালিত লেগুনা ও সেফ লাইন নামে তিন শতাধিক গাড়ি মহাসড়কে চলাচল করে। এছাড়া সীতাকুণ্ড এলাকায় তিন শতাধিক সিএনজিচালিত টেঙি ও দুই শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। এসব গাড়ির চালকদের বেশির ভাগই অদক্ষ। স্থানীয় রিকশাচালকেরা অভিজ্ঞতা ছাড়াই এগুলো চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এছাড়া মহাসড়ক চার লেন হওয়াতে সড়কে গাড়ির চাপ অনেকটা কমে গেছে। যার ফলে চালকেরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। আর ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এসব গাড়ি।
পথচারী ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাড়ি চালানো, মাত্রাতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকের প্রতিযোগিতা, চালকদের অবসাদগ্রস্ত কিংবা মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো, যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি এবং চালকদের অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও অনভিজ্ঞতা এবং ট্রাফিক আইন না জানা ও যথাযথ অনুসরণ না করা এসব দুর্ঘটনার কারণ হলেও প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা রোধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বারআউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি খোকন চন্দ্র ঘোষ জানান, মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে চালকের ওভারস্পিড, ওভারটেক ও ওভারলোডের কারণে ক্রমে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এসবের নেপথ্যে রয়েছে অধিকাংশ চালকের দুর্বলতা। বেশি টাকা উপার্জন ও একাধিক ট্রিপ মারতে ঘুমচোখে গাড়ি চালানো এবং ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য বহন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এছাড়া চালকের পরিবর্তে তার সহকারীকে দিয়ে গাড়ি চালানোর ফলেও ঘটছে দুর্ঘটনা।