বান্দরবানে স্থানীয় নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে সাড়ে ৫ কোটি টাকায় নির্মিত চারতলা বিশিষ্ট বিপণি কেন্দ্র অযত্ন–অবহেলায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। তদারকি না থাকায় ভবনটি বর্তমানে পরিণত হয়েছে মাদকাসক্তদের আশ্রয়স্থলে। ২০১৮ সালে নির্মিত ভবনটি সময় মতো চালু না হওয়ায় নারী উদ্যোক্তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভবনটিও।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অর্থায়নে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধনকৃত মহিলা সমিতি ভিত্তিক ব্যতিক্রমী ব্যবসায়ী উদ্যোগ (জয়িতা–বান্দরবান) শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় চারতলা বিশিষ্ট মহিলা বিপণি কেন্দ্র ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মি. ইউটি মং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। ২০১৮ সালে ভবনটি নির্মাণের পর এলজিইডি পক্ষ থেকে ভবনটি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জেলার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র মেঘলায় ২০ শতক জমিতে ২৭ হাজার ২৯৯ বর্গফুটের বিশিষ্ট মহিলা বিপণি কেন্দ্র ভবনে ১৪৭২ বর্গফুট জুড়ে রাখা হয়েছে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা। ৮৪০ বর্গফুটের একটি চাইল্ড কেয়ার কক্ষ, ১৪৮০ বর্গফুটের মাল্টি পারপাস হল রুম, ৪শ বর্গফুটের দুটি ইন্সপেকশন রুম রয়েছে। এছাড়াও পুরো ভবনে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৪৫টি দোকানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্থানীয় নারী উদ্যোক্তাদের এককালীন ২৫ হাজার টাকা জামানত এবং মাসিক দুই হাজার টাকা ভাড়া হিসবে দোকান বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা সাইং সাইং উ বলেন, পাহাড়ের নারীদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির সুবিধার জন্য মহিলা বিপণি কেন্দ্র ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ভবনে আমি দুটি দোকানও বরাদ্দ নিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম ভবনটি চালু হলে স্থানীয়ভাবে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা বাণিজ্য সমপ্রসারিত হবে। দেশি–বিদেশি ভ্রমণকারীরা একি ছাদের তলায় নারীদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র খোঁজে পাবে। কিন্তু নির্মাণের সাত বছর হলেও এটি এখনো বন্ধ, এটি বন্ধ থাকা মানেই স্থানীয় নারীদের পিছিয়ে যাওয়া, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। তাই দ্রুত বিপনী কেন্দ্রটি চালুর দাবি জানাচ্ছি। নারী উদ্যোক্তা ফেরদৌস সাথী বলেন, ভবনটি চালু স্থানীয় নারীদের কর্মসংস্থানের একটি সুযোগ তৈরি হত। অনেকেই ভবনটি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে কর্মসংস্থান তৈরির জন্য। ভবনটি সময়মত চালু না হওয়ায় নারী উদ্যোক্তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি অযত্নে অবহেলায় ভবনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দার উলা মিয়া বলেন, মহিলা বিপণি কেন্দ্র ভবনটি নির্মাণের পর থেকেই অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। ভেবেছিলাম ভবনটি চালু হলে আশপাশের এলাকাটি আলোকিত হয়ে উঠবে দেশি–বিদেশি মানুষের আনাগোনায়। কিন্ত তদারকি না থাকায় ভবনের অনেক জিনিসপত্র খুলে চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ভবনটি বখাটে এবং নেশাগ্রস্তদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। রাতের বেলায় মদ–জুয়ার আসর বসায় নেশাগ্রস্তরা। ভবনে আগুন লেগেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল একবার।
বান্দরবানে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক সুপন চাকমা বলেন, জনবান্ধব এবং শহর থেকে দূরে হওয়ায় নারী উদ্যোক্তারা ততটা আগ্রহী নয় বিপণি কেন্দ্রে। ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ, পানির সুবিধা এবং নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সামপ্রতিক সময়ে পার্বত্য উপদেষ্টাসহ ঊর্ধ্বতনরা ভবনটি পরিদর্শন করে ভবন নির্মাণে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি চিহ্নিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে সংস্কার প্রকল্প হাতে নেয়। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর ভবনটি চালু করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সমিতি ভিত্তিক সংগঠিত করে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণন ব্যবস্থা শক্তিশালী করণসহ ৬৭ উদ্দেশ্য নিয়ে জয়িতা বান্দরবান কর্মসূচি প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।