৫ আগস্ট সংসদের একটি কক্ষে স্পিকারসহ ১২ জন অবস্থান করতে বাধ্য হই

আদালতে বললেন পলক

| বৃহস্পতিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

সরকার পতনের দিন ৫ আগস্টে সকাল থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এবং সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১২ জন জাতীয় সংসদ ভবনের ‘একটি কক্ষে পালিয়ে ছিলেন’। পরে ‘সেনাবাহিনী তাদেরকে উদ্ধার করে’ নিয়ে যায় বলে আদালতকে জানিয়েছেন পলক।

গণঅভ্যুত্থানে আব্দুল জব্বার হত্যা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানের আদালতে দাঁড়িয়ে সরকার পতনের দিন তাদের পালিয়ে থাকার তথ্য তুলে ধরেছেন পলক। খবর বিডিনিউজের।

পলক বলেন, ‘মামলার ঘটনার যে তারিখ ও সময়ের কথা শুনতে পেলাম তার বিষয়ে বলছি। ৫ আগস্টে সন্ধ্যা বা রাতে মহান জাতীয় সংসদে রাত আড়াইটা পর্যন্ত স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, আমিসহ ১২ জন আবদ্ধ ছিলাম। সেখানে ছিলাম। সেদিন সংসদ ভবন আক্রান্ত হয়েছিল। পরে সেনাবাহিনী আমাদের উদ্ধার করে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। ন্যায়বিচার চাই।’

পলককে আদালতে হাজির করা হয় সকালে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর তিনদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে পলককে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানের আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। এসময় পলক আদালতের কাছে কথা বলার জন্য এক মিনিট সময় চান। তখন পলক জানিয়েছেন, সংসদ ভবন আক্রান্ত হলেও সেদিন তিনিসহ কয়েকজন সেখানেই ছিলেন গভীর রাত পর্যন্ত।

তখন প্রসিকিউটর ফারুকী বলেন, ‘তিনি (পলক) স্বীকার করলেন পার্লামেন্টে পালিয়ে ছিলেন। শিরীন শারমিনও সেখানে ছিলেন। তাকে এখনো পাইনি।’

প্রসিকিউটর ফারুকী বলেন, আন্দোলনের সময় যে পাঁচজন আন্দোলন দমাতে বক্তব্য রাখত তাদের একজন পলক। নেট বন্ধ করে হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছে। তিনি ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন না বললে হাস্যকর মনে হবে। যিনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন এবং যিনি সহযোগিতা করেছেন সমান অপরাধী। পরে পলক বলেন, ৮৬ দিন রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। প্রয়োজনে জেলগেইটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিতে পারেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে জুলাই, গত বছরের ৫ আগস্টে সকাল সোয়া ১০ টার দিকে বাড্ডার ডিআইজি প্রজেক্ট এলাকায় রং মিস্ত্রী আব্দুল জব্বার গুলিতে নিহত হন। এই হত্যা মামলায় পলককে আসামি করা হয়েছে।

সরকার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট ‘দেশত্যাগের চেষ্টার’ সময় পলককে ঢাকার শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেওয়ার খবর আসে। তখন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, পলককে ‘একটি বাহিনীর কাছে’ হস্তান্তর করা হয়। এরপর তাকে বিভিন্ন সময় হত্যা, হত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দফায় দফায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখা নিয়ে তদন্তের মুখোমুখি হন পলক। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, তার নির্দেশেই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয় এবং সেবা থেকে বঞ্চিত হন দেশের মানুষ।

পলকের গ্রেপ্তারের তথ্য জানানোর সময়েই ডেপুটি স্পিকার টুকুর গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছিল পুলিশ। সরকার পতনের ২৭ দিনের মাথায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পদত্যাগের খবর আসে গেল বছরের ২ সেপ্টেম্বর।

শেখ হাসিনার পতনের পর দিশেহারা আওয়ামী লীগের এমপিমন্ত্রী ও বিভিন্ন পদধারী নেতাকর্মীদের কেউ কেউ দেশ ছাড়তে পারলেও বেশিরভাগ থেকে যান দেশে। তবে ‘জীবনশঙ্কা’ থেকে অনেকে সেনাবাহিনীর কাছে আশ্রয় নিয়েছে বলেও এর আগে সেনাপ্রধান ওয়াকারউজজামান বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কোনো মামলায় অভিযুক্ত হলে তাদের আইন ও বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিয়ানমারের সাথে বাণিজ্যে পয়সা নিচ্ছে আরাকান আর্মিও
পরবর্তী নিবন্ধকাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা প্রধান উপদেষ্টার