জুলাই আন্দোলন শুধু বীরত্বের নয়, একই সঙ্গে বেদনার গল্প বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। জুলাই জাদুঘর নিয়ে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের ব্যবহৃত জিনিস স্মৃতি আকারে সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে এটা শুরু হয়েছে। এটার জন্য বড় টিম তৈরি হয়েছে; যারা দেশজুড়ে আগামী দেড় মাস কাজগুলো করবে। এটার জন্য কমিটি হয়েছে, অনেকগুলো সাব–কমিটি হয়েছে। আশা করি, আগামী দেড় মাসের মধ্যে কাজগুলো শেষ করে ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই জাদুঘর খুলতে পারব।
গতকাল রোববার সকালে নগরের লালখান বাজারে শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর বাসায় গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই সংগ্রহশালার জন্য চট্টগ্রাম থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি সংগ্রহ শুরু করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। চট্টগ্রামে শহীদদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের পোশাক ও ব্যবহার্য বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করছেন তিনি। গতকাল সকালে উপদেষ্টা লালখান বাজারে শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর বাসায় যান। এ সময় সেখানে তার মায়ের কান্নায় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শান্তর মা উপদেষ্টার হাতে ছেলের পোশাক ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র তুলে দিয়ে ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন।
এ সময় সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যেকটা ফ্যামিলিতে তাদের চোখের দিকে তাকালে এটা আপনি সহ্য করতে পারবেন না। এই যে তাদের বেদনাটা আমরা এখানে দেখলাম, আমাদের কাজ হবে জুলাই জাদুঘর যে ভিজিট করবে তার কাছে সেটা ট্রান্সফার করা। জুলাই শুধু বীরত্বের নয়, একই সঙ্গে বেদনারও গল্প। সে গল্প যেন একই পরিমাণ বেদনা নিয়ে জাদুঘরের ভিজিটরের কাছে যায়। এটা আমাদের কাজ। এ কাজ করার জন্য আমরা শহীদদের কিছু অবজেক্ট কালেক্ট করছি। শুধু অবজেক্ট না, যে শূন্যতা শহীদদের মায়েরা ফিল করছেন সে শূন্যতা যেন আমাদের ফটো ডকুমেন্টেশন সিরিজে উঠে আসে সেটার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। অবজেক্ট নেওয়া এবং এ শূন্যতাকে কীভাবে ধারণ করা যায় সে কাজটা আমরা চট্টগ্রাম থেকে শুরু করলাম। তবে এ ধরনের কাজ করতে সময় লাগে। কিন্তু আমাদের হাতে সময় কম। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার বিচারের ব্যাপারে সবচাইতে ফোকাসড। আমি নিজে তো সরকারের বাইরে ছিলাম। এখন সরকারে ঢোকার পর বুঝতে পারি নিয়মতান্ত্রিক জটিলতা কত ভয়াবহ। ধরেন আমি দৌড়াই ১০০ মিটার গতিতে। নিয়ম আমাকে টেনে ধরে বলে দৌড়াও স্লো ম্যারাথনের গতিতে। এটা বাস্তবতা। সে বাস্তবতার মধ্যেই আপনারা জানেন যে আজ থেকে একটা মামলার বিচার কাজ শুরু হয়েছে। এটা লাইভ ব্রডকাস্ট করা হচ্ছে টেলিভিশনে, যাতে করে সবাই জানতে পারে এখানে কী হচ্ছে। আমরা কোনো অন্যায় বিচার চাই না। কারণ বাংলাদেশে জুলাইতে যে জুলুম হয়েছে এবং আগের ১৬ বছর যা হয়েছে এটা কোনোটা বানোয়াট ঘটনা না। আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে। আমরা একটা শক্ত বিচার চাই। সেই ন্যায়বিচার হলে আপনারা দেখবেন অপরাধী তার প্রাপ্য শাস্তি পাবে। আজকে প্রসেসটা শুরু হয়েছে। আমি নিশ্চিত প্রত্যেকটা মামলার বিচার হবে।
তিনি বলেন, খুনি এখনো বলছে সে কোনো খুন করেনি। তাদের মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নাই। জুলাই জাদুঘরের কাজ হবে খুনির সব অপরাধ জাতির সামনে তুলে ধরা। যেন ৫০ বছর পর আমরা যখন কেউ থাকব না, তখনকার প্রজন্ম যেন জাদুঘরে গিয়ে দেখতে পায় আসলে কী হয়েছিল।
শহীদ শান্তর বাসা থেকে সার্কিট হাউসে ফিরে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শহীদ শহিদুল ইসলাম ও মো. ফারুকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের ব্যবহার্য সামগ্রী গ্রহণ করেন। এর আগে শনিবার তিনি চট্টগ্রামে নিহত শহীদ ওয়াসিম আকরামের চকরিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করেন এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।