মাত্র ৫৪০ টাকার টাইপিস্ট থেকে বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন চট্টগ্রাম আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের নির্বাহী অফিসার আলতাফ হোসেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে আলতাফ হোসেনের নামে বেনামে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, খামার, দোকানসহ অঢেল সম্পদ খোঁজ পাওয়ায় তাঁর সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য অনুমতি চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দেন দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। প্রসঙ্গত, গতবছর আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক আল মামুদ হোসেন ঘুষের ১৫ হাজার টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার হওয়ার মামলা তদন্তে নেমে একই অফিসের নির্বাহী অফিসার আলতাফ হোসেনের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের হদিস পান দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা।
দুদক সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঘুষের টাকাসহ চট্টগ্রাম আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে সহকারী নিয়ন্ত্রক আল মামুদ হোসেনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে দুদক। ওইদিন তার বিরুদ্ধে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক (বর্তমানে সহকারী পরিচালক) রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় দন্ডবিধির ১৬১ ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক সপ্তাহ কারাভোগের পর আল মামুদ হোসেন বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। ইতোমধ্যে ওই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুদক।
এদিকে এ মামলার তদন্তে নেমে চট্টগ্রাম আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের নানা অনিয়ম সম্পর্কে জানতে পারে দুদক। সরকারি প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির অনুমতিপত্র নিতে গেলেই নির্ধারিত অংকের ঘুষ দিতে হয়। প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তা এই ঘুষ দুর্নীতির সাথে জড়িত। এরমধ্যে ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে ওই কার্যালয়ের নির্বাহী অফিসার আলতাফ হোসেনের বাড়ি, গাড়ি, খামারসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে আলতাফ হোসেনের সম্পদ অনুসন্ধানের অনুমতি চেয়ে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে পত্র দিয়েছেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা।
জানা যায়, আলতাফ হোসেন ২০০৫ সাল থেকে চট্টগ্রামে পদায়িত আছেন। তিনি টাইপিস্ট হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানটিতে। ২০১২ সালে সর্বশেষ পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। নিজের গ্রামের বাড়ি ফেনীতে হলেও চট্টগ্রামের হালিশহর থানাধীন শান্তিবাগ আবাসিক এলাকার বশির মোহাম্মদ সড়কে ৬ তলা বিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে।
দুদক অনুসন্ধানে নেমে নগরীর হালিশহরে ৬ তলা বাড়িটির হদিস পান। বাড়িটির আনুমানিক মূল্য দেড় কোটি টাকা বলে উল্লেখ করেছেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। তাছাড়া সিজিএস কলোনীতে ১০ লাখ টাকা মূল্যের দোকান, সিটি গেইট এলাকায় ৬ গন্ডা জমিতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যমানের গরুর খামার রয়েছে। আলতাফ হোসেনের রয়েছে নিজের প্রাইভেট কারও। আবার স্ত্রীর বুটিকস ব্যবসা দেখিয়ে কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে দাবি দুদকের।
সরেজমিন দেখা যায়, বশির মোহাম্মদ সড়কের ৪৪০/এ (নতুন) প্লটে ৬ তলা বাড়িটির নাম রাখা হয়েছে ‘পিস ল্যান্ড’। প্রতি তলায় দুই ইউনিটের বাড়িটির একটি ফ্ল্যাটে তিনি বসবাস করলেও অন্য ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দিয়েছেন। বাড়ির দাড়োয়ান কামরুজ্জামান বলেন, ফ্ল্যাটগুলোর ইউনিট প্রতি ভাড়া ১১-১২ হাজার টাকা।
এবিষয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে সিজিএ বিল্ডিংয়ের আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে কথা হলে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বাড়িটি আমার, খামারও আমার। ইতোমধ্যে দুদকের একাধিক টিম আমার অফিসে এসে তদন্ত করেছে। আমার যা কিছু আছে সবই আমার আয়কর রিটার্নে ঘোষণা দেয়া আছে।’
বাড়িটি নিয়েও ঝামেলা কম হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জায়গাটি আড়াই গন্ডার কম। বিল্ডিং করার জন্য ডেভেলপারকে দিই। তিন তলার ছাদ পর্যন্ত করে কাজ ফেলে রেখেছিল। পরে তাদের কিছু বেনিফিট নিয়ে আমি পুরোটা নিয়ে নিয়েছি। বাড়ির বিপরীতে এখনো কয়েক লক্ষ টাকা অপরিশোধিত ঋণ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার হওয়া আল মামুদ হোসেনই তার এক দালাল রেজাকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে এসব করছেন। তারপরও আমি দুদকে এমন সাক্ষ্য দিয়েছি, যাতে সে (আল মামুদ) শাস্তি থেকে বেঁচে যায়। অথচ সে জামিনে বেরিয়ে আমার বিরুদ্ধে নামে বেনামে অভিযোগ দিচ্ছে।’