৫০ ঘণ্টায়ও নিভেনি আগুন

বের হচ্ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ।। রাসায়নিকের চারটি কন্টেইনার শনাক্ত ।। নিহতের সংখ্যা সংশোধন করে হলো ৪১

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৭ জুন, ২০২২ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

ঘটনার ৫০ ঘণ্টার বেশি সময় পার হলেও অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া সীতাকুণ্ডের কাশেম জুট মিলসের পার্শ্বস্থ বিএম কন্টেইনার ডিপোর আগুন পুরোপুরি নেভেনি। গতকাল সোমবারও একাধিক কন্টেইনারে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। আকাশ কালো করে উড়ে বেড়াচ্ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। তবে গতকাল সোমবার এই মৃত্যুকূপ থেকে নতুন করে কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহতের তথ্য সংশোধন করে নিহতের সংখ্যা ৪১ জনে নামিয়ে এনেছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। গতকাল কেমিকেল ভর্তি আরো চারটি কন্টেইনার শনাক্ত হওয়ার পর নতুন করে আতংক তৈরি হয়। তবে উদ্ধারকারীরা কন্টেইনার চারটিকে নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে রেখেছে।

সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএম কন্টেইনার ডিপোতে শনিবার রাতে যে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল তা এখনো পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। গতকালও ডিপোতে ৬/৭টি কন্টেইনারের ভিতরে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। এসব কন্টেইনার থেকে তীব্র কুণ্ডলী পাকিয়ে বের হচ্ছে ধোঁয়া। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু কন্টেইনার সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে গতকাল সকাল ১০টার দিকে ডিপোতে রাসায়নিক পণ্য ভর্তি আরো চারটি কন্টেইনারের হদিশ মিলেছে। এই চারটি কন্টেইনার সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এগুলো উদ্ধারকাজে বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি করছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। বিশেষ করে কোন কন্টেইনারে কী আছে, কেমিকেল বা রাসায়নিক ভর্তি কন্টেইনারগুলো ডিপোর ঠিক কোন অংশটিতে রয়েছে সেই সম্পর্কে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য-উপাত্ত না থাকায় উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে তারা মন্তব্য করেন।

ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, আমরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ করছি। তারা অনাহুত ভিড় না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। অবশ্য গতকালও সেনাসদস্যরা ডিপোতে প্রবেশের ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি করেছেন। তারা অনাহুত ভিড় ঠেকাতে লোকজনকে সরিয়ে দিয়েছেন। ডিপোতে কন্টেইনারে আরো রাসায়নিক থাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারীরা বিস্ফোরণের আশংকা করছেন এবং ডিপো থেকে লোকজনকে সরিয়ে দিচ্ছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে আমাদের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, রাসায়নিক পণ্য ভর্তি কয়েকটি কন্টেইনারের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে আমরা নিরাপদ পরিস্থিতি তৈরিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

ডিপোতে নতুন করে বিস্ফোরণ হতে পারে এমন একটি আতঙ্ক গতকাল বেশ চাওর হয়ে উঠে। বিশেষ করে গতকাল সকালের দিকে আগুনের তীব্রতা হঠাৎ করে বেড়ে গেলে নতুন করে আতংক তৈরি হয়। এসময় লোকজনদের সরিয়ে নেয়া হয়। এই আতংকে আশেপাশের অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে যান। ডিপোর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাদের। ডিপোতে কাজ করা শ্রমিকেরা যেখানে থাকতেন সেখানকার ভাড়া ঘরগুলো প্রায় খালি হয়ে গেছে। ডিপোর আশপাশের গ্রামগুলোর আতঙ্কিত লোকজনের অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। বেশির ভাগ পরিবারই তাদের শিশু সন্তানদের আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলেও আমাদের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে ছড়িয়ে আছে আগুনে পোড়া ধ্বংসাবশেষ। কোথাও পুড়ে যাওয়া পোশাক, আবার কোথাও বিস্ফোরিত হওয়া বিভিন্ন রাসায়নিকের প্লাস্টিকের জার। বিস্ফোরণের পর লোহার টুকরা, কন্টেইনার এবং কাভার্ড ভ্যানের ধ্বংসাবশেষ ছিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ে আছে। বিস্ফোরণে স্টিলের এসব পাত তীব্র বেগে এদিকওদিক উড়ে গিয়ে মানুষকে হতাহত করেছে। ডিপোর ভেতরে ৬৫০ মিটার দীর্ঘ একটি আধাপাকা টিনশেড ভবন ছিল। সেটিও ধ্বংস হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে ছয় সাতটি কন্টেইনারে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।

বিএম কন্টেইনার ডিপো পুরোপুরি লন্ডভন্ড হয়ে রয়েছে। একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন অবকাঠামো। ডিপোর আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী, বাতাসে বিষাক্ত রাসায়নিকের গন্ধ। আগুনে পুড়ে যাওয়া কন্টেইনার এবং জার থেকে রাসায়নিক মিশ্রিত ধোঁয়া উদ্ধারকর্মীদের জন্য হুমকি হয়ে রয়েছে। সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ
পরবর্তী নিবন্ধচাম্বলের চেয়ারম্যান মুজিবের বিরুদ্ধে মামলা