আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তন। এ সমাবর্তন ঘিরে ক্যাম্পাসে নানামুখী প্রস্তুতি। ১৯টি উপ–কমিটি গঠন করা হয়েছে সমাবর্তন সফল করার জন্য। সবকটি কমিটি তাদের কাজ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সনদের কাজ প্রায় শেষ বলে জানা গেছে। প্রত্যোকটি বিভাগে তাদের নিজস্ব বিভাগের কনভোকিদের বেশিরভাগ উপহার সামগ্রী পৌঁছে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে চলছে প্যান্ডেল প্রস্তুতি। সবমিলিয়ে পঞ্চম সমাবর্তন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে এখন শুধু সমাবর্তনের আমেজ। বর্তমান শিক্ষার্থীরা এতে সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও তাদেরও আগ্রহ–আনন্দের শেষ নেই। এ নিয়ে কনভোকিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে গাউন পরে সমাবর্তনে অংশ এ বার্তা প্রচার করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যেও শুরু হয়েছে সমাবর্তন নিয়ে প্রবল উত্তেজনা। এ নিয়ে চারদিক যেনো উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। পুরো ক্যাম্পাসকে সাজানো হচ্ছে নতুন করে। এছাড়া ক্যাম্পাস জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বাহারী ফুলের সমাহার। সোনালু, জারুল আর কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে বিমোহিত সবাই। ২৩’শ একরের পাহাড় ও সবুজের মায়ায় ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক সবুজের স্বর্গরাজ্য। সমতল থেকে খুব একটা উঁচু না হলেও এ পাহাড় চূড়ায় দাঁড়ালে যে কারও চোখ জুড়াবে। চারপাশে সবুজে ঘেরা নৈসর্গিকতায় মুগ্ধ হবেন যে কেউ। বিকেল হলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও দর্শনার্থী অসংখ্য শিক্ষার্থী আসে এই পাহাড় ভ্রমণে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক ও বিভিন্ন স্থাপনা সংস্কার করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর মেরামত করা হচ্ছে চবির দুই নম্বর গেট সড়কটি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে শহীদ মিনারে নতুন করে রঙ করা হচ্ছে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ঝুলন্ত সেতু সংস্কার করে নান্দনিক করা হয়েছে। এছাড়াও আবাসিক হল, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের গাছগাছালি ও লাইব্রেরিকে বর্ণিলভাবো সাজানো হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে, যেখানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের ধারণা, ওইদিন ক্যাম্পাসে প্রায় ১ লাখ মানুষের সমাগম হতে পারে। এ জন্য মূল প্যান্ডেলের বাইরে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নেয়া হচ্ছে বিকল্প আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সরাসরি অনুষ্ঠান দেখার জন্য লাগানো হবে বড় পর্দা। আগে অনুষ্ঠানস্থলে মোবাইল নিতে বিধিনিষেধ থাকলেও পরে মোবাইল নিয়ে যাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সমাবর্তন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, সমাবর্তনের দিন প্রায় ১ লাখ মানুষ ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকবেন বলে আমরা ধারণা করছি। এ জন্যই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দায় অনুষ্ঠান সমপ্রচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সমাবর্তন নিয়ে আমরা দিন–রাত কাজ করে যাচ্ছি। চবির পঞ্চম সমাবর্তনকে ভালোভাবে সম্পন্নের জন্য আমরা ১৯টি উপ–কমিটি গঠন করেছি। দেড় লক্ষ বর্গফুটের প্যান্ডেল করা হচ্ছে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠানের জন্য। কনভোকিরা বসার জন্য আসন বিন্যাস এবং সম্ভাব্য দুর্যোগ মাথায় রেখে যাবতীয় কাজ করা হচ্ছে। আমাদের কনভোকি বেশি হওয়ায় প্রস্তুতি ভালোভাবে নেওয়া লাগতেছে। এজন্য ক্যাম্পাসের ১নং গেটের ভিতরে কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি প্রবেশ করবে না। কনভোকিদের জন্য ১০০টি শাটল বাস থাকবে। এছাড়া অতিরিক্ত শিডিউলে শাটল ট্রেন থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। সকল স্তরের নিরাপত্তা বাহিনী ও এসএসএফ বাহিনী থাকবে। এ নিয়ে তাদের সাথে আমাদের দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। তিনি জানান, সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের পরিবারে সদস্যদের জন্য প্যান্ডেলে আসনের ব্যবস্থা থাকবে না। তবে অনুষদ প্রাঙ্গণে গেস্টদের জন্য সাময়িক বসার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে তারা বসে বিশ্রাম নিতে পারেন।
জানা গেছে, এবারের সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন ২২ হাজার ৫৬০ জন গ্র্যাজুয়েট। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও চবির প্রাক্তন শিক্ষক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে ডি.লিট ডিগ্রি প্রধান করা হবে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।
সংবাদ সম্মেলন: সমাবর্তন উপলক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) এর কার্যালয়ের সভাকক্ষে সমাবর্তনের বিস্তারিত পরিকল্পনা সাংবাদিকদের জানান সমাবর্তনের প্রচার ও প্রকাশনা উপ–কমিটি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমাবর্তন উদযাপন কমিটির সদস্য–সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী, উপ–কমিটির আহ্বায়ক ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ তালুকদার, তথ্য ও ফটোগ্রাফি শাখার প্রশাসক ড. শহীদুল হকসহ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে সমাবর্তন উদযাপনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংশ্লিষ্টরা।
সমাবর্তিদের জন্য থাকবে ১০০ বাস: সমাবর্তনের দিন সকাল ৬টা থেকে শহরের নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে ১০০টি বাস সমাবর্তিদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসবে। সমাবর্তন শেষে এগুলো আবার শহরে ফিরে যাবে।
সমাবর্তিদের মানতে হবে বিশেষ নির্দেশনা: ১. দুপুর ১টার পরে কোনো সমাবর্তীকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে দিবে না এসএসএফ। এমনকি লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ১টা বেজে গেলে বাকিরা প্রবেশ করতে পারবেন না। ২. দুপুর ২টায় মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। শেষ হবে ৪টায়। এরমধ্যে অনুষ্ঠানস্থল থেকে কেউ বের হতে বা প্রবেশ করতে পারবে না। জরুরী প্রয়োজনে মেডিকেল টিম ও ওয়াশরুমের ব্যবস্থা থাকবে। ৩. মোবাইল ছাড়া আর কিছু সাথে নেওয়া যাবে না। এছাড়া ব্রেস্টফিডিং বাচ্চাদের না নিতে বলা হয়েছে। ৪. ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসলে ড্রাইভার নিয়ে আসতে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। সমাবর্তী নিজে ড্রাইভ করে আসলে সমাবর্তন মিস করতে পারেন। কারণ ১ নম্বর গেটের ভেতরে কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হবে না। ৫. ক্যাম্পাসের খাবার হোটেল খোলা থাকলেও সমাবর্তন বক্তা ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসার রুটে কোনো হোটেল থাকলে সেগুলো বন্ধ করা হতে পারে।
৫টি পয়েন্টে থাকবে এলইডি পর্দা: সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য শহীদ মিনার, জারুল তলা, সায়েন্স ফ্যাকাল্টিসহ ৫টি পয়েন্টে এলইডি পর্দায় অনুষ্ঠান দেখানো হবে। বিটিভিও সরাসরি প্রচার করবে সমাবর্তন অনুষ্ঠান।