পটিয়া পৌরসভার বিদায়ী পরিষদের ৪ কোটি টাকার ফান্ড স্থিতি নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আইয়ুব বাবুল ও পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। সাবেক মেয়রের রেখে যাওয়া চার কোটি টাকার কোনো হদিস পাচ্ছেন না বলে জানান বর্তমান মেয়র আইয়ুব বাবুল। সাবেক মেয়র উল্টো আড়াই কোটি টাকা দেনা রেখে গেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ গত ৯ মার্চ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শত শত মানুষের সামনে পৌরসভার প্রতিবেদনে জানান, বিভিন্ন ব্যাংকে পৌরসভার ৪ কোটি টাকা স্থিতি আছে। এর ৬ মাস পর গত ২৮ নভেম্বর বর্তমান মেয়র আইয়ুব বাবুল পটিয়া পৌরসভার বাজেটোত্তর মতবিনিময় সভায় নতুন আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তাতে ৪ কোটি টাকা স্থিতির বদলে প্রায় আড়াই কোটি টাকা দেনা দেখান। এ বিষয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরও দেন তিনি। পটিয়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ তার বিদায়ী অনুষ্ঠানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দশ বছর আগে ৫ কোটি টাকার দেনাসহ দায়িত্বভার গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন এবং বিদায় বেলায় পৌর ফান্ডে নগদ ৪ কোটি টাকা রেখে বিদায় নিচ্ছেন। স্বাবলম্বী করেছেন পৌরসভাকে। শত কোটি টাকা ব্যয়ে পটিয়া পৌরসভা ভবন, কিচেন মার্কেট, মাদার ড্রেন, ফুটপাত ও লাইটিংসহ দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন। পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরীর সার্বিক সহযোগিতায় এসব উন্নয়ন ও সফলতা আনা সম্ভব হয়েছে।
বর্তমান মেয়র আইয়ুব বাবুল তাঁর প্রকাশিত প্রতিবেদনে পৌর ফান্ডে ৪ কোটি টাকার স্থিতির বদলে আড়াই কোটি টাকার দেনার কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে পৌরসভার বৈলতলী রোড়স্থ যে জমি ব্যক্তি বিশেষের কাছে বিক্রি করা হয়েছে তা সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করা হবে বলে জানান। পৌরসভার কোটি টাকা ব্যয়ে কিচেন মার্কেট পরিত্যক্ত বিষয়ে তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ওই মার্কেটটি পুরোদমে চালু করা হবে। সে লক্ষ্যে একটি ব্যাংক ও বিভিন্ন কোম্পানির সাথেও আলোচনা চলছে। আইয়ুব বাবুল আরো বলেন, ভ্যাট, ঠিকাদারদের দেনা, বিদ্যুৎ বিল ও বিএনডিএফ সহ আড়াই কোটি টাকার দেনা রেখে উল্টো ৪ কোটি টাকার ফান্ড স্থিতি দেখানো হয়েছে।
সাবেক মেয়রের বিদায় বেলায় যেসব পৌর কর্মকর্তা ছিলেন তারা এখনো বহাল আছেন। সে সময় হিসাব বিভাগ ৪ কোটি টাকা স্থিতি দেখায় আর বর্তমানে আড়াই কোটি টাকা দেনা দেখাচ্ছে। তথ্য বিভ্রাট আর বিভ্রান্তির বিষয়ে কাউন্সিলর গোফরান রানা বলেন, এ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে পৌরসভার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদের কারণে। এ প্রসঙ্গে মেয়র আইয়ুব বাবুল বলেন, সাবেক মেয়রের বিদায় বেলায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন ‘শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া আর কিছুই নয়’। সাবেক মেয়রের সময়ে ৪ কোটি টাকার স্থিতি ও বর্তমানে আড়াই কোটি দেনার প্রতিবেদন কোনটি সত্য এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক হারুনুর রশিদক বলেন, ‘বিভিন্ন বিভাগের তৈরি করা প্রতিবেদন তিনি বিদায় বেলায় প্রকাশ করেছিলেন। সাবেক ওই পরিষদের কর্মকর্তারা বর্তমান পরিষদে দায়িত্বে এখনো রয়েছেন। হিসাব বিভাগ সে সময় ৪ কোটি টাকার স্থিতি কিভাবে দেখিয়েছে এবং বর্তমানে কিভাবে আড়াই কোটি টাকা দেনা দেখাচ্ছে তারাই ভালো বলতে পারবে।’
জানতে চাইলে পৌরসভার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি সাবেক মেয়র বা পৌর কর্তৃপক্ষকে ৪ কোটি টাকার স্থিতির কোনো কথা বলিনি। বলেছি হিসাব বিভাগ স্বচ্ছভাবে কাজকর্ম পরিচালনা করায় পৌর কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোনো দেনা পাওয়া নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘ব্যালেন্স ও দেনা এক জিনিস নয়। স্থিতি আর এ্যাসেট এক জিনিস হতে পারে না।’












