দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চাকরির বাজার যখন ক্রমে সম্প্রসারিত হচ্ছে তখন ৪০ জনের বেশি নাবিক (রেটিংস) ভর্তিতে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ সীফ্যারার্স ইউনিয়ন। বিষয়টিকে সরকারি উদ্যোগ বানচাল করার ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি বড় খাত হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকলেও এই ধরনের ষড়যন্ত্রে লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে নাবিক সংকট ঘুচিয়ে দেশি-বিদেশি জাহাজে যোগ্য ও দক্ষ নাবিক দেওয়ার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ বানচাল করা হলে পুরো খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনসহ জাহাজ পরিচালনাকারী বিভিন্ন কোম্পানি সরকারি ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে (এনএমআই) বাড়তি নাবিক ভর্তি করানোর আহ্বান জানিয়ে আসছিল। নাবিক চাহিদা মেটাতে বাড়তি ব্যাচ ভর্তি করে নাবিক প্রশিক্ষণের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে বাড়তি নাবিক প্রশিক্ষণের অনুমোদন দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ সীফ্যারার্স ইউনিয়ন এই বাড়তি ব্যাচ ভর্তি করতে দেবে না বলে হুমকি দিয়েছে।
ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম বলেন, নাবিক সংকট মিটিয়ে জাহাজ চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে যোগ্য, দক্ষ নাবিক পেতে সরকারি-বেসরকারি অনেকগুলো জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে চিঠি দিয়ে দ্রুত নাবিক (রেটিং) দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ৬৪ জন, ব্রোভ রয়েল শিপ ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ২৭ জন, ভ্যানগার্ড মেরিটাইম লিমিডেট ১২ জনসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান অনুরোধ করেছে। আমরা মান বজায় রেখে তাদের আবেদনগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় নিয়মিত ৯০ জনের বাইরে আরো ৪০ জন রেটিংস নির্বাচনের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদন পেয়ে বিদ্যমান ব্যাচ থেকেই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আরো ৪০ জনকে নির্বাচিত করি। এটাকে নিয়মের ব্যত্যয় বা বেআইনি বলার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, এর আগেও এই ইউনিয়ন নাবিকদের চাকরির সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতে সেটি টিকেনি। শুধু তাদের কারণে গত তিন বছরে অন্তত ৩শ ক্যাডেট প্রশিক্ষণ পাওয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা সরকারের নাবিক কর্মসংস্থান উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করতে পুনরায় চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিষয়টি কঠোরভাবে দেখার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়কে বলেছি।
গত ১৬ মে বাংলাদেশ সীফ্যারার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রেটিংস বা নাবিক প্রশিক্ষণ নির্বাচন পরীক্ষা বিজ্ঞপ্তিকে বেআইনি ও উদ্দেশ্যমূলক অভিহিত করে সেটি সাতদিনের মধ্যে প্রত্যাহারের জন্য ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ইউনিয়নের সভাপতি সৈয়দ মো. আরিফ হোসেন সেখানে লিখেছেন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী মেরিটাইম এডভাইজরি কমিটির মতামত ছাড়া রেটিংস নির্বাচন সম্পূর্ণ বেআইনি।
সীফ্যারার্স ইউনিয়নের সভাপতি সৈয়দ মো. আরিফ হোসেন বলেন, একটি বিশেষ সিন্ডিকেট সুকৌশলে রেটিংস ভর্তির ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করছে। কোনো ধরনের আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে নানা অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রেটিংস ভর্তি করা হয়েছে। রাত সাড়ে চারটার সময় রেজাল্ট দেওয়া হয়েছে। প্রতিজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। নিজেদের সিন্ডিকেটের বাইরে কাউকে ভর্তি করা হচ্ছে না। ৯০ জন ভর্তি করার পর ওয়েটিং লিস্ট বা নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে আবার ৪০ জন রেটিংস ভর্তি করা হয়েছে। আমরা বেআইনি এসব কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করছি। তিনি বলেন, দেশে কোনো নাবিক সংকট নেই।
ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিমের অভিযোগ, দক্ষ ও যোগ্য নাবিক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ৪ মে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর আবু জাফর মো. জালাল উদ্দিনের সই করা চিঠিতে এনএমআই চট্টগ্রাম শাখার ২৩তম ব্যাচ ও মাদারীপুর শাখার ১২তম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী রেটিংস সংখ্যা পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি জানানো হয়। এতে এনএমআই চট্টগ্রাম শাখায় ২৬ জন ডেক রেটিং, ১৫ জন ইঞ্জিন রেটিং, ১০ জন স্টুয়ার্ড, ১৯ জন কুক, ১৫ জন ফিটার কাম ওয়েল্ডার ও ১৫ জন ইলেকট্রিশিয়ান মিলে ১০০ জন, মাদারীপুর শাখায় ১৫ জন করে ডেক রেটিং ও ইঞ্জিন রেটিং ভর্তি করে প্রি সী রেটিং ট্রেনিং কোর্সের অনুমতি দেওয়া হয়।