রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী তিন মাস ধরে বেতন-ভাতা, মাইলেজ ও পেনশন পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সকালে সিআরবিতে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে রেজিস্টার্ড ও নন-রেজিস্টার্ড শ্রমিক সংগঠনসমূহ নিয়ে গঠিত রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী অংশ নেন। এ সময় তারা জিএম (মহাব্যবস্থাপক) বরাবরে স্মারকলিপি দেন।
পরবর্তীতে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বৈঠকে বসেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন এবং পূর্ব রেলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা (পূর্ব) কামরুন নাহারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় তারা বেতন-ভাতা, মাইলেজ ও পেনশন পাওয়ার ব্যাপারে কর্মচারীদের আশ্বস্ত করেন।
জানা গেছে, ৩ মাস ধরে রেলের প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক ও আড়াই হাজার পেনশনভোগী পেনশন ভাতা পাচ্ছে না। গত রমজানের ঈদে শ্রমিকরা বেতন-বোনাসবিহীন ঈদ উদযাপন করেছেন। ঈদ শেষে আন্দোলনরত কর্মচারীরা জিএম ও পূর্ব রেলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার সাথে দেখা করলে ধাপে-ধাপে বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়। কিন্তু পরবর্তী মাস থেকে আবারো বেতন-ভাতা আটকে যেতে থাকে বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।
রেল থেকে কখনো আইভাস সিস্টেমে ত্রুটি, কখনো বাজেট সংকটের কথা বলা হলেও প্রকৃত জটিলতা নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। এমন জটিলতায় রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন শ্রমিকরা। রেল শ্রমিক লীগ, রেল শ্রমিক দল, রানিং লোকো স্টাফ কর্মচারী, ট্রাফিক কল্যাণ ঐক্য পরিষদ, স্টেশন মাস্টারসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নেন।
পরে রেলওয়ে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লোকমান হোসেন, রেল শ্রমিক দলের সভাপতি এম আর মঞ্জু, রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা বৈঠকে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য শুনে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, উনারা বেতন, মাইলেজ ও পেনশন বকেয়া নিয়ে আমাদের সাথে বসেছেন। ইতোমধ্যে গতকাল (মঙ্গলবার) ৯৫ পার্সেন্ট পেমেন্ট এসেছে। অবশিষ্ট পেমেন্টে শীঘ্রই চলে আসবে বলে আশা করছি। মাইলেজ জটিলতা নিয়ে মহাব্যবস্থাপক বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা কামরুন নাহার আজাদীকে জানান, বেতন-ভাতা এবং পেনশন নিয়ে আর কোনো সমস্যা নেই। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেতন-ভাতা পাওয়া যাবে। তাদের (শ্রমিক-কর্মচারীদের) সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। গত দুদিন ধরে এগুলো নিয়ে কাজ করেছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি।
তিনি আরো বলেন, তারা (শ্রমিক-কর্মচারী) বেতন-ভাতা না পাওয়াতে আন্দোলন করেছে। আমাদের সাথে যখন বসেছেন-আমি তাদের বিস্তারিত বলেছি। তারা আমার কথা শুনে আশ্বস্ত হয়েছেন। পেনশনের সব ঠিক হয়ে গেছে। ৫/৭ দিনের মধ্যে তাদের সকল সমস্যাও সমাধান হয়ে যাবে। ১ তারিখ থেকে পেনশন পাবেন। আর মাইলেজের বিষয়টি আইভাস প্লাস সিস্টেমের কারণে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে-সেটিরও সমাধান হয়ে যাচ্ছে। রেল অনেক বড় একটি সংস্থা। দীর্ঘদিন এক ধরনের ব্যবস্থায় চলেছে। এখন নতুন সিস্টেম চালু হয়েছে। একটু সময় তো লাগবে।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমান আজাদীকে বলেন, আমাদের ৪টি ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী গত ২/৩ মাস যাবত বেতন, মাইলেজ, টিএ ও পেনশন পাচ্ছেন না। কারো ৩ মাস, কারো ২ মাস এবং কারো ১ মাস যাবত বেতন ভাতা-পেনশন বকেয়া রয়েছে। গত ঈদেও অনেক কর্মচারী বেতন-বোনাস পাননি। ঈদের পরে পেয়েছেন। আসন্ন কোরবানী ঈদেও একই জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে ট্রাফিক, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেকানিক্যাল বিভাগের শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে এই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের আগে এনালগ পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হতো। তখন কোনোদিন বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হয়নি। বর্তমানে আইভাস প্লাস সিস্টেমের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বেতন-ভাতা পরিশোধের প্রক্রিয়া চালু করতে যাচ্ছে।
কিন্তু পুরোপুরি সিস্টেম চালু করার আগেই আমাদের দুই-তিন মাসের বেতন ও ভাতা আটকে গেছে। আমরা জিএমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছি। উনারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। জিএম বলেছেন, ইতোমধ্যে বেশকিছু বেতন-ভাতা চলে এসেছে। অবশিষ্ট বেতন ভাতাও চলে আসবে।