দুই লাখ বৈদ্যুতিক প্রি-পেইড মিটার তৈরির জন্য তিন বছর আগে জাঁকজমকভাবে করা হয়েছিল সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। জিইএম (জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড) প্লান্ট হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামে দেশের রাষ্ট্রীয় একমাত্র বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিতে সমঝোতার একবছরের মধ্যেই এসব মিটার তৈরির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তিন বছরেও আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি। এই সময়ের মধ্যে অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনে (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদে স্থলাভিষিক্ত হন তিন আমলা। মূলত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বদলের কারণেই প্রকল্পটি আর এগোয়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এক চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার পরে নতুন চেয়ারম্যান এসে নতুন করে কাজ শুরু করেন। আর তাদের প্রতিযোগিতার কারণেই প্রকল্প এগুতে পারে না বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, প্রাথমিকভাবে সিঙ্গেল ফেইজ ও থ্রি ফেইজ প্রি পেইড মিটার তৈরি ও বাজারজাত করতে ওই সমঝোতা স্মারক হয়েছিল। সমঝোতার ১৫ দিনের মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করার কথা ছিল। এরপর চুক্তি সাপেক্ষে পরবর্তী এক বছরের মধ্যে দুই লাখ প্রি-পেইড মিটার তৈরির কথা জানানো হয়েছিল জিইএম প্লান্টের পক্ষ থেকে।
সূত্রে জানা গেছে, এক লাখ প্রি-পেইড মিটার তৈরির জন্য ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স ইলেট্রো ম্যাক লিমিটেডের (সিইএমএল) সাথে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) সমঝোতা স্মারক অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন জিইএম প্লান্টে অনুষ্ঠিত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসইসি’র তৎকালীন চেয়ারম্যান সীমা সাহা। ওইদিন বিএসইসি’র পক্ষে কর্পোরেশনের সচিব ড. মোহাম্মদ আমিরুল মোমিন এবং সিইএমএলের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখতারুজ্জামান সমঝোতায় সই করেন। জিইএম প্লান্টের কারখানাতেই এসব মিটার তৈরি হওয়ার কথা ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে বৈদ্যুতিক প্রি-পেইড কিংবা স্মার্ট মিটারের চাহিদা রয়েছে। দিন যতই গড়াবে ততই চাহিদা কমে আসবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে জিইএম প্লান্টের প্রি-পেইড মিটার তৈরি প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে, বাড়তে পারে ব্যয়ও। এতে মিটারের দামও বাড়বে। যখন এ মিটার বাজারে আসবে, তখন হয়তো আন্তর্জাতিক বাজারের ভালো মানের মিটারের সাথে প্রতিযোগিতায় ঠিকবে না।’
জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রায় সাড়ে ৮ লাখ গ্রাহক রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এক লাখ ৩৯ হাজার গ্রাহকের প্রি-পেইড মিটার সংযোজনের জন্য ২০১৬ সালে চীনা প্রতিষ্ঠান মেসার্স হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের সাথে ‘প্রি পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর ডিস্ট্রিবিউশন সাউদার্ন জোন’ শীর্ষক প্রকল্পের চুক্তি করে পিডিবি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে চার লাখ প্রি-পেইড মিটার সংযোজন করে পিডিবি। এরপর বিগত দুই বছরেও অবশিষ্ট ৪ লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
বিএসইসি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রধান প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক প্রধান রোববার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘দুই লাখ স্মার্ট মিটার তৈরির জন্য একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছিল। এতটুকুই জানি। কিন্তু প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা বলতে পারবে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান (জিইএম প্লান্ট)। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকই প্রকল্প সম্পর্কে ভালো তথ্য দিতে পারবেন।’
এর আগে রোববার দুপুরে সরেজমিনে নগরীর উত্তর পতেঙ্গাস্থ জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড (জিইএম প্লান্ট) কার্যালয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলামের সাথে। তবে ‘প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে’ উল্লেখ করে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
কনফিডেন্স ইলেট্রো ম্যাক লিমিটেডের (সিইএমএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আখতারুজ্জামান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেকগুলো ক্রাইটেরিয়া লাগে। এখন প্রকল্পটিতে মিনিস্ট্রির কিছু কাজ আছে, আমাদের কিছু কাজ আছে, বিদেশীদেরও কিছু কাজ আছে।’ তিনি বলেন, ‘সমঝোতা চুক্তির পরই ২০১৮ সালে বিএসইসির ওই সময়ের চেয়ারম্যান বদলি হয়ে যান। এরপর নতুন চেয়ারম্যান (মিজানুর রহমান) আসেন। উনি নতুন করে কাজ শুরু করেন। এতে ১৯ সাল চলে যায়। ২০২০ সালের শুরুতে আবারো নতুন চেয়ারম্যান (মো. রইছ উদ্দিন) আসেন। ২০২১ সালে উনিও চলে যাবেন। তাছাড়া করোনাকালীন গত এক বছরেও আমরা পিছিয়েও পড়েছি। এভাবে প্রকল্পটি বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’ শীতের মৌসুম কেটে গেলেই নতুন করে প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা জানান তিনি।