নগরের পৃথক তিনটি ওয়ার্ডে ৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় তিনটি সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রকল্পগুলো হচ্ছে– ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ৩ কোটি ২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৭ টাকা ব্যয়ে ফিরোজশাহ মাঠের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন, ১১ নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা ব্যয়ে বহুরূপী মাঠের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন এবং ২৬ নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে ২ কোটি ৭৮ লাখ ১৬ হাজার ৮৭৭ টাকা ব্যয়ে মহেষখালের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ‘লোকাল গভর্মেন্ট কোভিড–১৯ রিকভারি প্রজেক্ট’ এর আওতায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।
গতকাল প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে ডা. শাহাদাত বলেন, আমার ইচ্ছা নগরের ৪১টি ওয়ার্ডেই খেলার মাঠ, ওয়াকিং স্পেস ও শিশুপার্ক গড়ে তুলব। ফিরোজশাহ ও বহুরূপী মাঠ উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা যুবসমাজকে শরীর চর্চার সুযোগ দিতে চাই, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। তিনি বলেন, আমি চসিকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প নিচ্ছি নাগরিকদের সুস্থ বিনোদন সুবিধা বৃদ্ধিতে। এছাড়া অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোর সাথেও ভূমি বরাদ্দের জন্য যোগাযোগ করেছি। আগ্রাবাদ শিশু পার্ক, জিয়া শিশু পার্ক, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেক্সও নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। বিপ্লব উদ্যানে একটা স্ট্রাকচার করা হচ্ছিল সেটি ভেঙে গ্রীন পার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছি। কারণ আমি দেখেছি শিশুদের খেলার অধিকার নিয়েও বৈষম্য তৈরি হয়েছে। টার্ফ গড়ে উঠার কারণে অস্বচ্ছল ঘরের ছেলেরা খেলতে পারছে না। এ কারণে আমার ইচ্ছা প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নিশ্চিত করা। শিশুদের খেলার মাঠে ফিরাতে পারলে মাদক সমস্যা, কিশোর গ্যাং কমে আসবে।
শাহাদাত বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হলো চট্টগ্রামকে একটি গ্রিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলা। মহেশখালের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের মাধ্যমে খালের পাড়ে গ্রিন ভিউ এবং ওয়াকওয়ে তৈরি করা হবে, যাতে নাগরিকরা এই এলাকায় বিনোদনের সুযোগ পান। এই উদ্যোগ নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। পাহাড় ও সমুদ্রের রাজ্য হয়েও এখানে বিনোদনের সুযোগ সীমিত। আমরা চাই, পার্ক এবং মাঠ বৃদ্ধি পেয়ে নাগরিকরা একটি আধুনিক এবং সুখী জীবনের স্বাদ পাবে। এটি শুধু উন্নয়ন নয়, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারও।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। জনগণকে সজাগ থেকে পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের কর্মীদের মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে এবং জনগণের সাথে মিলেমিশে কাজ করছি।
শহরের জলাবদ্ধতার প্রসঙ্গ টেনে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। এই সমস্যার মূল কারণ হল খাল পরিষ্কার না থাকা এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন। আমরা খালগুলোর গভীরতা বাড়ানো, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছি। এছাড়া সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে খাল খননের কার্যক্রম আরও কার্যকর করতে হবে।
এসময় জলবদ্ধতা দূর করতে আগামী বর্ষার আগেই নগরের খাল খনন ও পরিষ্কার করে দুই পাড় হাঁটাচলার উপযোগী করা হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, সামনে বর্ষাকাল। বর্ষার আগে খালগুলো যাতে পরিষ্কার থাকে। খালগুলো যাতে একটু খনন করা হয় এবং ময়লাগুলো যেন অপসারণ করা হয়। কারণ খালের মধ্যে পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, ককশিট এবং নন–পেরিসেবল ওয়েস্টেজ যেগুলো খালে ফেলে দিচ্ছে সেগুলো জলাবদ্ধতার মূল কারণ।
তিনি বলেন, কারণ কর্ণফুলী নদীতেও যদি আমরা দেখি, সেখানে দেখব যে ৮–১০ মিটার পলিথিন হয়ে গেছে। এখানেও প্রতিটা খালের মধ্যে ২–৩ ফুট পলিথিনের স্তর পড়ে গেছে। এগুলো মিলিয়েই কিন্তু জলাবদ্ধতা হয়। এজন্য গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন রাখাই মূল কথা।
তিনি খালের দুই পাড়ে হাঁটার পথ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে বলেন, মানুষ এখন এখানে হাঁটতে পারছে না। ওয়াকওয়ে করে দিলে তারা খালের পাড়ে হাঁটতে পারবে। খালও একটা বিনোদনের জায়গা হিসেবে করতে চাই। এটা হলে পরিচ্ছন্নতাও বাড়বে। মানুষও আসবে। অব্যবহৃত থাকলে, মানুষ অনেক কিছু ফেলতে থাকে। যখন আসার সুযোগ পাবে, তখন দেখতে পারবে খাল অপরিচ্ছন্ন কি না। এসময় খালে দুই পাড়ে হাঁটার পথ তৈরি হলেও কোনো ধরনের দোকানপাট করা হবে না বলে জানান তিনি। মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতার প্রকল্প মূলত সিটি কর্পোরেশনের করার কথা ছিল। এটাই উচিত ছিল। কিন্তু আমরা আসলে দেখেছি, রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন ভাবে সিটি করপোরেশনকে বাইপাস করে সেটা সিডিএ করেছে। সিডিএ সেটা শুরু করেছে ২০১৬ সালে। সেটা শেষ হবে ২০২৬ সালে। যখন শেষ হবে তখন ফাইনালি আমরা বুঝতে পারব জনগণ কতটা সুফল পাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাড়ই পাড়া খাল যদিও শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে কিন্তু জমি অধিগ্রহণে কিছু সময় লেগেছিল। কিন্তু এত সময় লাগা উচিত ছিল না। আমি বলে দিয়েছি, দ্রুত আগাতে। কাজ প্রায় শেষের দিকে। আশাকরি দ্রুত শেষ করতে পারব। সমন্বয়ে জোর দিয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় আমরা খাল খনন করতে চাইলে সিডিএ বলে এটা তাদের এলাকা। বর্তমান সিডিএ চেয়ারম্যানের সাথে আমি মিলেমিশে কাজ করছি। এখানে দরকার হলো নগর সরকার। মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথম থেকে বলেছেন। এ জায়গায় এড্রেস করতে না পারলে পরিকল্পিত উন্নয়ন সম্ভব না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন ও নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার জাহান।