৩৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করার কাজ চলছে

রামগড়-বারইয়ারহাট রুট ।। সহজ হচ্ছে ভারত থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানি

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

রামগড়ে ভারত মৈত্রী সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবার পর এখন চলছে স্থলবন্দর নির্মাণ কাজ। আবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে সংযোগের জন্য রামগড় থেকে মীরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে করেরহাট যেতেই বিশালাকার দুটি ব্রিজ ও দুপাশের বিশাল সড়ক মহাসড়কের আদলে রুপান্তরের বাস্তব চিত্র দেখে বোঝাই যাচ্ছে এই রুটটিতে কেমন উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের পর অচিরেই বারইয়ারহাট-করেরহাট-রামগড় এলাকা হয়ে উঠবে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বাণিজ্যিক জোন।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, পুরো ৩৮ কিলোমিটার সড়কজুড়ে দুটি পৃথক প্রকল্প কাজ করছে। একটি প্রকল্পে জাইকার অর্থায়নের ৮টি ব্রিজ, ৮টি কালভার্টের কাজ এখন প্রায় শেষের দিকে। আরেকটি প্রকল্পে ভারতীয় অর্থায়নে ৯টি পিসি গার্ডার ব্রিজ ও ২৩টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কিছু কাজ এখনো বাকি রয়েছে। এই পুরো উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ হলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষকে বেনাপোল, চেংড়াবান্দা বা আখাউড়া হয়ে ভারতে প্রবেশ করতে হবে না। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েই ইমিগ্রেশান সেরে দুপুরে ভারতে পৌঁছাতে পারবে। আবার পণ্য আমদানি রপ্তানিতেও সংযুক্ত হলো নতুন সুবিধা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই চলে যেতে পারবে ভারত। বিশেষ করে মীরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চলের নানা পণ্য রপ্তানি-আমদানিতেও হলো সহজ রুট।

বারইয়ারহাট-করেরহাট রুটের পুরাতন মহাসড়কসহ রামগড় রুটটি বিশালাকার প্রশস্থকরণে ইতিমধ্যেই বাণিজ্যিক চাঞ্চল্যতা বেড়ে গেছে। পুরাতন ঝিমিয়ে থাকা পেট্রোলপাম্পগুলো নড়ে চড়ে উঠেছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন পেট্রোল পাম্প, সিএনজি ও এলপিজি স্টেশন। তবে ইতিমধ্যে উক্ত সড়কের প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধিও ঘটেছে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার বলেন, প্রকল্পের আওতায় বারইয়ারহাট থেকে রামগড় পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও রামগড় স্থল বন্দরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ উন্নত, নিরাপদ ও ব্যয় সাশ্রয়ী যোগাযোগ নিশ্চিত করা যাবে। এজন্য প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য একনেক উপস্থাপনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে ক্ষতিপূরণ ভূমি অধিগ্রহণ, কাস্টমস ডিউটি, সড়কবাঁধে মাটির কাজ, বিদ্যমান পেভমেন্ট প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ। এছাড়া বিদ্যমান পেভমেন্ট উচুঁকরণ, হার্ড শোল্ডার, সার্ফেসিং, ৯টি পিসি গার্ডার ব্রিজ ও ২৩টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বারইয়ারহাট-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পে মূল ব্যয় ছিল ৮৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এখন ২৬১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ১ হাজার ১০৭ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে ৩০.৯৪ শতাংশ। যা আরো বাড়তে পারে বলেও জানা গেছে। একইসঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদও ২ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এজন্য ‘বারইয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন করতে হচ্ছে।
২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও রামগড় স্থলবন্দরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।

এই বিষয়ে এই রুটের সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন, প্রকল্পাধিন অধিকাংশ ব্রিজের কাজ শেষ হয়ে গেছে। কয়েকটির সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। এখন সড়কের প্রস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী এক বছরের মধ্যে পুরো রুটে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল শুরু করতে পারবে।

মীরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রামগড় ও মীরসরাই উপজেলা নয় শুধু, পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ নতুন অনেক সুবিধার আওতায় আসবে। যোগাযোগের পাশাপাশি বানিজ্যিক সম্ভাবনার এই নতুন দীগন্ত উম্মোচন করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় নির্বাচনে জেতার সক্ষমতা নেই বিএনপির : নওফেল
পরবর্তী নিবন্ধপোর্ট কলোনিতে কিশোরীর লাশ উদ্ধার