কর্ণফুলীতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ৩৩ হাজার ভোল্টের একটি লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দগ্ধ হওয়ার পাঁচদিন পর মো. সিয়াম (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. আলমগীর।
নিহত শিশু সিয়াম কর্ণফুলীর শিকলবাহা (৩ নং ওয়ার্ড) বোর্ডস্কুল পাঠান পাড়া এলাকার সিএনজি চালক মো. রাজুর ছেলে। সিয়াম স্থানীয় একটি মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের ছাত্র। পরিবারে এক বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সিয়াম ছিল বড়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট শিকলবাহা ৩ নং ওয়ার্ডের পাঠান পাড়া এলাকায় অবস্থিত সাতকানিয়া ভবনে ভাড়া বাসার দুই তলার ছাদে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করার সময় ৩৩ হাজার ভোল্টের তারে অসতর্কতাবশত শিশু সিয়াম বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। সেখান থেকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করায়। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং সেখান থেকে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজধানীর ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে মারা যায় শিশু সিয়াম।
নিহত শিশুর বাবা মো. রাজু বলেন, কাকে দোষারোপ করব বলেন– ভবন মালিক ৩৩ হাজার ভোল্টে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভবন করল। অথচ তাদের স্থানীয়রা বারবার বারণ করলেও এক ধরনের একগুঁয়েমি করে তারা ভবনটি তৈরি করেন। আর পিডিবিও ঘনবসতি এলাকায় ৩৩ হাজার ভোল্টের লাইন দিল। এখন আমার ছেলের প্রাণ গেল। ৫ দিনে ধারদেনা করে ৩ লাখ টাকা খরচ করেও ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না। অথচ ভবন মালিক প্রথম দিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও পরে তারা আমাদের ফোন পর্যন্ত ধরেনি। তিনি বলেন, আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে আর এই লাইনে আর কত মানুষের মৃত্যু হলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে? এ প্রসঙ্গে পটিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী আ. স. ম. রেজাউন নবী বলেন, এই এলাকায় ৩৩ হাজার ভোল্টের লাইন অনেক আগে থেকে। এইখানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভবনটি করা হয়েছে। কখন কিভাবে করেছে তা জানা নেই। তবে তারা সেখানে একটি দেয়াল তৈরি করে দিলে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভবনা নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে দুর্ঘটনাস্থল সাতকানিয়া নামের ভবনটির মালিক আশরাফ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কেটে দেন। পরে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন ও ম্যাসেজ করেও ভবন মালিকের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে বুধবার দুপুরে ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুৎ লাইনে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভাঙার পাশাপাশি পিডিবির গাফিলতি উল্লেখ করে এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা ঠেকাতে স্থানীয়রা মানববন্ধন করেন।