দুই যুগেরও বেশি আগে নেয়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বাড়ইপাড়া খাল খনন প্রকল্প গতি পাচ্ছে। বহদ্দারহাট এবং সন্নিহিত অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর আগে প্রকল্পটি একনেকে পাশ হলেও কার্যতঃ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। অবশেষে প্রকল্পটির ব্যাপারে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য কাল চট্টগ্রামে আসছেন। একই সাথে আরো কয়েকটি প্রকল্পও তিনি পরিদর্শন করবেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আউটার রিং রোড প্রকল্পের ব্যাপারেও তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেটসহ বহদ্দারহাট এলাকার পানি কর্ণফুলীতে যাওয়ার জন্য নগরীর বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত একটি খাল খননের কথা বলা হয়েছিল ১৯৯৫ সালের মাস্টারপ্ল্যানে। দিনে দিনে ভয়াবহ হয়ে উঠা জলাবদ্ধতার কবল থেকে নগরীর বিস্তৃত এলাকা রক্ষায় খালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নয়া খালটি বাড়ইপাড়ার চাক্তাই খালের অংশ থেকে শুরু করে বলিরহাট হয়ে কর্ণফুলীতে পড়বে। প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি খননের জন্য চসিক বেশ আগে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ৩২৬ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে ওই প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ২০১৪ সালের ২৪ জুন একনেকে পাশ হয়। ২০১৭ সালের জুনে নয়া খাল খননের উক্ত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটির জন্য সর্বমোট ২৫ দশমিক ২৬ একর জমি অধিগ্রহণ করার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কিছুই হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রকল্পটি নিয়ে আবারো আলোচনা হয়। প্রকল্পটি সংশোধন করে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও কাজ না হওয়ায় গত বছরের জুন মাসে আবারো প্রকল্পটি সংশোধন করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। ৩২৬ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় সাত বছরের ব্যবধানে এসে দাঁড়ায় ১৩৭৪ কোটি টাকা। গত বছরের ২৮ জানুয়ারি চসিক নয়া খাল খননের প্রকল্পটি উদ্বোধন করে। কিন্তু উদ্বোধনের পর আর কোনো কাজ হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রয়োজনীয় ২৫ দশমিক ১৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকার ৯১৪ কোটি টাকা চসিকে প্রদান করেছে। সিটি কর্পোরেশন এই অর্থ ভূমি হুকুম দখলের জন্য জেলা প্রশাসনে জমা দিয়েছে। নয়া এই খালটি খনন করা হলে নগরীর ষোলশহর ২ নম্বর গেট থেকে শুরু করে মুরাদপুর, শুলকবহর, বাড়ইপাড়া, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, বাকলিয়া ও চাক্তাই এলাকায় জলাবদ্ধতা বহুলাংশে কমে যাবে বলেও বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।
মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি নিয়ে আবারো আলোচনা শুরু হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রকল্পটি দেখতে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোহাম্মদ মামুন আল রশিদ চট্টগ্রাম আসছেন। তিনি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে উক্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথের অন্তরায়গুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
কাল সকাল ১১টা নাগাদ চট্টগ্রামে পৌঁছে তিনি বাড়ইপাড়া নয়া খাল খনন প্রকল্প পরিদর্শনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিমানবন্দর সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণসহ শহরের প্রায় ৭০০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে গৃহীত প্রকল্প নিয়েও আলোচনা করবেন। উক্ত ২০২০ সালের মার্চ মাসে ‘প্রকল্প যাচাই কমিটি’ অনুমোদন দেয়। সর্বশেষ গত ১৬ জুন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি’র (পিইসি) সভায় ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকার প্রকল্পটি কয়েকটি শর্তে অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে পিইসি’র নির্দেশনা মেনে প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধনের কাজ করছে চসিক। দ্রুত সংশোধিত ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী। এরপর প্রকল্পটি একনেক সভায় উত্থাপিত হবে বলেও জানান তিনি।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ মামুন আল রশিদ পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আউটার রিং রোড প্রকল্পও পরিদর্শন করবেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যের চট্টগ্রাম সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, কমিশন বিভিন্ন প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাই কমিশন সদস্যের প্রকল্পগুলো পরিদর্শন বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পই আলাদা করে গতি পাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।