ইন্টারনেট পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন–পিএসসি এর অধীনে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় ক্যাডার, নন–ক্যাডারসহ সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান এ তথ্য দিয়ে বলেন, ২৮ জুলাই থেকে ১ অগাস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় প্রথম অর্ধবার্ষিক বিভাগীয় পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) পদে নিবন্ধনের সময় ৮ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। স্থগিত পরীক্ষাগুলোর তারিখ–সময় পিএসসির ওয়েবসাইট ও পত্রিকার মাধ্যমে পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে, বলেছেন মতিউর রহমান। খবর বিডিনিউজের।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সংঘাত–সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ জুলাই রাতে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা এবং বৃহস্পতিবার রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়।
পিএসসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩১ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা (ক্যাডার–নন ক্যাডার) অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। নন–ক্যাডারের সব লিখিত, ব্যবহারিক, মৌখিক পরীক্ষাও ওই সময় পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এটিইও পদে অনলাইনে নিবন্ধনের সময় ছিল ২৫ জুলাই পর্যন্ত। ইন্টারনেট চালু না থাকায় নিবন্ধনের সময় ৮ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন পিএসসির এই জনসংযোগ কর্মকর্তা।
এদিকে পিএসসি সচিবালয়ের প্রশিক্ষণ সহকারী, সাঁটলিপিকার–মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, হিসাব সহকারী, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, গাড়িচালক, অফিস সহায়ক এবং নিরাপত্তা প্রহরী পদে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের আগামী ৪ আগস্ট যোগ দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকেই আন্দোলন চালিয়ে আসছিল শিক্ষার্থীরা। তারা ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচির পর সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করলে আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। এক সপ্তাহে প্রাণ যায় প্রায় দুইশ মানুষের। গত বৃহস্পতিবার থেকে পরের দুই দিনে সেতু ভবন, বিআরটিএ ভবন, দুর্যোগ ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম, মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন, বিটিভি, হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর স্টেশন, এলিভেটেড এঙপ্রেস ওয়ের মহাখালী অংশ, মহাখালীতে সরকারের ডেটা সেন্টার, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, পুলিশ স্টেশন, বনশ্রী পিবিআই অফিস, উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি, উত্তরা ও মোহাম্মদপুর কমিউনিটি, মহাখালীন ডিএনসিসি হাসপাতাল, নরসিংদী কারাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ অবস্থায় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। সেই সঙ্গে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী।
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, ছাত্রদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বিএনপি–জামায়াত এসব নাশকতা ঘটিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরকারের পতন ঘটানো। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ইন্টারনেট ফিরতে শুরু করে। অগ্রাধিকার বিবেচনায় ব্যাংক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রপ্তানিমুখীখাতসহ অন্যান্য কয়েকটি খাতে আগে ইন্টারনেট দেওয়া হচ্ছে। সরকার বলেছে, ধীরে ধীরে সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হবে।