বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে কক্সবাজারের মহেশখালী ও মাতারবাড়ী ভবিষ্যতে শুধু চট্টগ্রামের নতুন সংস্করণ নয়; ৩০ বছর পর তা হবে সিঙ্গাপুর ও সাংহাইয়ের মত শহর। সমুদ্র তীরবর্তী এ দুই এলাকাকে ঘিরে সরকারের এমন প্রত্যাশার কথা বলেছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। অর্থনীতির নতুন এ কেন্দ্র থেকে জিডিপিতে দেড়শ বিলিয়ন ডলার অবদানের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগামী ৩০ বছর পর আমরা এখানে সিঙ্গাপুর, সাংহাইয়ের মত একটা টাউনশিপ দেখতে চাই। এটা হবে চট্টগ্রামের নতুন ভার্সন, যা হবে একই সঙ্গে অর্থনীতির হাব। খবর বিডিনিউজের।
বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী নবগঠিত মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষেরও (মিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নতুন এ কর্তৃপক্ষের সদস্যদের সাক্ষাতের পর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
দেশের অর্থ–বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় এ দুই এলাকাকে ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে আশিক চৌধুরী বলেন, এটি হচ্ছে ৩০ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনার সূচনামাত্র। উন্নয়নে ৬০ থেকে ৬৫ বিলিয়ন ডলারের মত বিনিয়োগ লাগবে। এর মধ্যে এফডিআই ৫ বিলিয়ন এবং বাকিটা হবে স্থানীয় বিনিয়োগ। সরাসরি দেড় লাখসহ মোট ২৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আশিক চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি তিন ধাপে সম্পন্ন হবে–প্রথম ধাপ ২০২৫ থেকে ২০৩০, দ্বিতীয় ধাপ ২০৩০ থেকে ২০৪৫ এবং তৃতীয় ধাপ ২০৪৫ থেকে ২০৫৫ পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২৫ লাখ লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে এবং জিডিপিতে দেড়শ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত হবে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে মিডা চেয়ারম্যান এ কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে বলেন, ২০১৪ সালে তখনকার সরকার বিগ–বি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কক্সবাজারের মহেশখালীতে একটি অর্থনৈতিক কিংবা পাওয়ার হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। ২০১৮ সালে জাইকা একটা খসড়া পরিকল্পনা ঠিক করেছিল। ৩৩ হাজার একর জমি নিয়ে প্রকল্পটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কাজগুলো করতে গিয়ে জটিলতায় পড়ছিল। সেই সমস্যা সমাধানে এই ধরনের অথরিটি বা কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা হয়।
বিদ্যুৎ ও জ্বলানিকে মহেশখালী পরিকল্পনার প্রথম স্তম্ভ হিসেবে বর্ণনা করেন আশিক চৌধুরী। বলেন, এখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের একটি প্রকল্প এখন দৃশ্যমান। আমরা আর কয়লাভিত্তিক করব না। পরবর্তীতে গ্যাস বা নিউক্লিয়ার পাওয়ারের দিকে চিন্তা করতে পারি। মাস্টার প্লানে লান্ডবেইজ দুটি এফএসআরইউ থাকবে।
তিনি বলেন, এখানকার দ্বিতীয় স্তম্ভ হবে গভীর সমুদ্রবন্দর। গভীর সমুদ্রবন্দর হলে সিঙ্গাপুর বা কলম্বো হয়ে আর ইউরোপে যেতে হবে না। সরাসরি সেখানে যেতে পারবো। এতে ব্যয় ও সময় সাশ্রয় হবে। তৃতীয়ত এখানে রপ্তানিমুখী শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ কারখানা স্থাপনের সম্ভবনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
মিডা চেয়ারম্যান বলেন, এই জায়গাগুলো ফ্রি ট্রেড জোনের জন্য একেবারেই উপযোগী। চাইলে আমদানি করে রাখা যাবে, আবার চাইলে উৎপাদন করে বিদেশে নিয়ে যাওয়া যাবে। তেল শোধনাগার থেকে শুরু করে প্রধান শিল্পায়নের যেকোনো উদ্যোগ সেখানে বাস্তবায়ন করা যাবে।
চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে মৎস্য আহরণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এটা আগেকার পরিকল্পনায় ছিল না। সমুদ্র থেকে যেসব সুবিধা পাওয়া সম্ভব তার সর্বোচ্চটুকু অর্জনে সহায়তা করব মিডা। যদিও সরকারের অনেকগুলো সংস্থা এটা নিয়ে কাজ করে। প্রথম পাঁচ বছরকে ধরা হচ্ছে ইনকিউবিশন পিরিয়ড। এই সময়ের মধ্যে কেবল গভীর সমুদ্রবন্দরটি চালু হবে। এর বাইরে কিছু পাওয়ার হাব, কিছু সড়ক ও কানেক্টিভিটির কাজ হবে। এরপর যেটা হবে ইকোসিস্টেম ডেভেলপমেন্টে প্রজেক্ট। এখানে কিছু ইন্ডাস্ট্রি, এলএনজি টার্মিনালগুলো দাঁড়িয়ে যাবে। ২০৩০ থেকে ২০৪৫ সালের মধ্যে এই কাজগুলো হবে। চূড়ান্ত বা ডাইভার্সিফিকেশন ফেইজে ইকোট্যুরিজম, অন্যান্য আবাসনসহ কাজগুলো হবে। ফলে কক্সবাজার ও মাহেশখালী একাকার হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে মিডার দুই সদস্যসহ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।