দেশের কৃষি সেক্টরে সারের মজুদ গড়ে তোলা, নিরবচ্ছিন্ন সারের যোগান এবং কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার প্রায় এক হাজার তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ৫ হাজার টন সার এবং ২০ হাজার টন ফসফরিক এসিড ক্রয় করছে। গতকাল অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই ক্রয় অনুমোদন করা হয়েছে। সরকার সৌদি আরব, দুবাই, রাশিয়া, মরক্কোসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি এবং ডিএপি সার উৎপাদনের জন্য চীন থেকে ফসফরিক এসিড আমদানি করছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশে চলতি অর্থবছরে সারের মোট চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ টন। দেশের মোট সারের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি আমদানি করা হয়। চড়াদামে আমদানিকৃত সার হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে সরকার কৃষকদের মাঝে বিক্রি করে। দেশে সারের উৎপাদন কিছুটা কমে এসেছে। বিশেষ করে ইউরিয়া এবং ডিএফি সার উৎপাদন কমেছে। দেশের সার কারখানাগুলো অনেকদিনের পুরানো হয়ে যাওয়ায় যান্ত্রিক ক্রুটির পাশাপাশি গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে সিইউএফএল, ঘোড়াশাল পলাশ সার কারখানা, কাফকো, ডিএপি সার কারখানার এক নম্বর এবং দুই নম্বর ইউনিট কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন কমেছে।
দেশের কৃষি সেক্টরে নিরবচ্ছিন্ন সারের যোগানের জন্য সরকারি গুদামগুলোতে পর্যাপ্ত মজুদ রাখতে হয়। সময়মতো সারের যোগান দেয়া সম্ভব না হলে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, দেশে সারের কোন সংকট হবে না। আমাদের সন্তোষজনক মজুদের পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ সার আমদানি করছে।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দুবাই থেকে ৪০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এ সার আমদানিতে প্রতি টন ৫৩২.৩৩ ডলার করে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯২ কোটি ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮০ টাকা। একই দরে সরকার সৌদি আরব থেকেও ৪০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি করছে। প্রতি টন ৫৩২.৩৩ ডলার করে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯২ কোটি ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮০ টাকা।
এছাড়া কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে সরকার প্রতিটন ৩৮০ ডলার করে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয় করছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৯ কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া সরকার মরক্কো থেকে দুইটি পৃথক চুক্তিতে ৩০ হাজার টন করে মোট ৬০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানি করছে। প্রতি টন ৫৪৮ ডলার দরে এই সার আমদানিতে সরকারের ব্যয় হবে ৪০২ কোটি ৪৫ লাখ ১২ হাজার টাকা।
সরকার রাশিয়া থেকে ৩৫ হাজার টন এমওপি সার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতি টন ৩৫৬.২৫ ডলার দরে এই সার আমদানিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫২ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
অপরদিকে ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে সার উৎপাদনের জন্য সরকার চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় উৎপাদিত ২০ হাজার টন ফসফরিক এসিড আমদানি করছে। প্রতি টনের দাম ৭৭৫ ডলার করে এই এসিড আমদানিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৯ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ফসফরিক সার ডিএপি সার কারখানার প্রধান কাঁচামাল। এই কাঁচামালের অভাবে কারখানাটি বহুদিন বন্ধ ছিল।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশে সারের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও সরকার আগাম সতর্কতা হিসেবে এসব সার ও সার তৈরির কাঁচামাল আমদানি করছে। নিরবিচ্ছিন্ন সারের যোগান দেশের কৃষি সেক্টরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।











