২৯শে এপ্রিল : স্মরণীয় একটি দিন

জোনাকী দত্ত | শনিবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

সেদিন ছিল ১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল, সোমবার। সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সবাই বলছে সিগন্যাল দিয়েছে। বন্যা হতে পারে। মাও স্কুলে যেতে বারণ করেছে। কিন্তু তারপরও স্কুলে গেলাম। সেদিন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান ছিল। ক্লাস তেমন হয়নি। বাড়িতে আমরা ফেরার পথে বলাবলি করছিলাম বন্যা হবে প্রতিবার বলে কিন্তু হয় না। একবারও বন্যা দেখিনি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত এলো। বৃষ্টির সাথে সাথে দমকা বাতাস বইছে।

টেলিভিশনের খবরে বারবার বলছে ১০ নাম্বার সিগন্যাল। বন্যার পূর্বে এবং পরে কী করতে হবে তা টিভিতে দেখাচ্ছে। যখন বারোটা বাজলো তখন দাদা হঠাৎ দরজা খুলে চিৎকার করে উঠল, মা, পানি পানি। মা তখন বিছানা থেকে নেমে গিয়ে দেখল সত্যি সত্যি বন্যার পানি আমাদের ঘরের দরজা পর্যন্ত এসে গেছে।

সাথে প্রবল বেগে ঢেউ। মা তখন আমাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলল। বন্যার পানির সাথে সাথে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল আর বাতাস প্রবল বেগে বইছিল। মাঝে মাঝে অগ্নিবৃষ্টি দেখা দিচ্ছে। মাঝে মাঝে নারিকেল গাছ থেকে ছাদে নারিকেল পড়ছে। বৃষ্টি, দমকা হাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে অন্ধকারে সবাই আতঙ্কে আছে। সবাই অপেক্ষা করছে কখন ভোরের আলো ফুটবে। এভাবে যখন রাত পার হয়ে সকাল এলো তখন দেখলাম বন্যার তাণ্ডব লীলা।

ছাদ থেকে দেখলাম সমস্ত ঘরবাড়ি পানিতে ভাসছে, গাছ ভেঙে পড়ে আছে, ঠিক টিভিতে যেরকম দেখতাম। ধীরে ধীরে বৃষ্টি আর বাতাস কমলো। কিছুক্ষণ পরে পানি কমতে শুরু করল। আমাদের রান্নাঘর ভেঙে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। শোবার ঘরগুলো পানিতে ভর্তি। দু’দিন পর আমাদের আত্মীয়স্বজনরা দেখতে এলো।

ওরা নাকি শুনেছে আমাদের পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু রিলিফ পাওয়া গেল। আমরা কিছু শুকনো খাবার রেখে বাকিগুলো পাশের বাসায় দিয়ে দিলাম। সপ্তাহখানেক পর ঘরে ঘরে সবার ডায়রিয়া, আমাশয় শুরু হলো। বন্যার পরে বৃষ্টি প্রায় বন্ধ। চারপাশের পুকুর থেকে দুর্গন্ধ ভেসে আসছে। কারেন্ট নেই। স্কুল বন্ধ। আমি প্রায় বিছানায়। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলাম। ২৯শে এপ্রিলের বন্যা আমার জীবনে দেখা প্রথম বন্যা। কষ্ট পেয়েছি, দেখেছি, আবার আনন্দের খবরও পেয়েছি। যা আমার চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিজের কাছে সৎ থাকা চাই
পরবর্তী নিবন্ধনৃত্যের সংস্কৃতি শরীরের অভিব্যক্তি