গঠনতন্ত্র না মেনে বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভাসহ চারটি ইউনিটে কমিটি দেয়ার ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে গত ২৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এরপর থেকেই মূলত অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। আটটি উপজেলা ও ছয়টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক এই বৃহৎ জেলায় গত ৬ বছর ধরে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। গত ৬ বছরে কোনো উপজেলায় সম্মেলন করতে পারেনি। সম্মেলন ছাড়াই বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা এবং কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরকম নানা অনিয়মের অভিযোগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলে নতুন কমিটির পদ প্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকসহ চট্টগ্রামের মন্ত্রী, কেন্দ্রীয় নেতা এবং জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে নানানমুখী চেষ্টা–তদ্বির শুরু করেন। শোনা যাচ্ছে, আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার আগে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হতে পারে। কোনো কারণে ২৮ তারিখের আগে ঘোষণা করতে না পারলে (মন্ত্রী–কেন্দ্রীয় নেতা এবং জেলার শীর্ষ নেতাদের দেয়া নামের তালিকার সঙ্গে কেন্দ্র সমন্বয় করতে না পারলে) জাতীয় নির্বাচনের আগে অবশ্যই কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে ছাত্রলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন।
এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ–সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর আজাদীকে বলেন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক চেষ্টা করছেন নতুন কমিটি দেয়ার ব্যাপারে। নির্বাচনের আগে যোগ্য প্রার্থীদের যাচাই–বাছাই করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হবে।
ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রায়ই ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানান।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী প্রার্থীদের তালিকায় যারা আছেন তারা হলেন– দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের গত কমিটির সহ–সভাপতি হোসাইন মাহমুদ পাভেল, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী সালেহ উজ্জামান তানভির, বিগত কমিটির সহ সভাপতি ইয়াছিন চৌধুরী জনি (সাতকানিয়া), বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক আবু বক্কর জীবন (বোয়ালখালী), শাহরিয়ার মুনির জিসান (বোয়ালখালী), বোয়ালখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব রাসেল, মো. ইরফান উদ্দিন (সাতকানিয়া), বিগত কমিটির সহ সভাপতি জয়নাল আবেদীন (সাতকানিয়া), সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আলী, লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদুর রহমান নিশাদ, কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসাইন, বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান চৌধুরী (বাঁশখালী) ও রবিউল হায়দায় রুবেল (আনোয়ারা)।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু ল’ ট্যাম্পল কলেজের ছাত্র এস এম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের ৫১ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ৪ মে এর প্রায় তিন বছর পর ২০২০ সালের ৪ মার্চ এস এম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক ঠিক রেখে গঠনতন্ত্র অমান্য করে ২৭৬ সদস্যের দক্ষিণ জেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এই কমিটি ঘোষণার পর পত্র–পত্রিকায় তুমুল সমালোচনা ঝড় উঠে। বিগত ৬ বছরে এই কমিটি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তেমন জোরদার করতে পারেনি। তারা যে সকল উপজেলা, পৌরসভা ও কলেজ কমিটি ঘোষণা করেছে সেগুলো নিয়েও সমালোচনা হয়েছে, এলাকায় বিক্ষোভ প্রতিবাদ হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর গঠনতন্ত্র না মেনে বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভাসহ চারটি ইউনিটে কমিটি দেয়ার ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে।