২০২৪ সালের ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। এ নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পাঁচজনকে ডিবির হেফাজতে নেওয়া হয়। গতকাল শনিবার ডিবির অতিরিক্ত উপ–কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার জানান, গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে জানতে ও তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এর আগে ২৬ জুলাই শুক্রবার বিকেলে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসারত অবস্থায় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়। খবর বাসসের।
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে আদালতের রায়ের পর সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনকে প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার রাতে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন তিন দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। এসব দাবি মানা না হলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানান তারা।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা ছিল, রোববারের মধ্যে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদসহ আটক সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থী গণহত্যার সাথে জড়িত মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সকল দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন সমন্বয়ক জানান, পুলিশের ধরপাকড়সহ নানা কারণে সব সমন্বয়কের সাথে তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না। যে কারণে সমন্বিতভাবে তারা কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারছেন না।
আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, আন্দোলনের মূল দাবি মেনে নেয়া হয়েছে বলে প্রচার করছে সরকার। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল কমিশন গঠন করে এই সংকটের সমাধান করা। কিন্তু সেটি করা হয়নি বলেই আমরা এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করছি।
সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তিনি জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই তিন দফা না মানা হলে পরশুদিন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আরও কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আগামীকাল রোববার থেকে সারা দেশে অনলাইন ও অফলাইন ব্যবহার করে প্রচারণা কার্যক্রম চালাবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দূতাবাসে দলিল পেশ করার পাশাপাশি সারা দেশে দেয়াল লিখন কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে সামপ্রতিক কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত–সহিংসতায় ২৬৬ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। এ ছাড়া ছাত্রদের নামে করা মামলাগুলোকে মিথ্যা বলে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়কের খোঁজ নিতে শনিবার বিকেলে ডিবি কার্যালয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা সেখানে ১৫–২০ মিনিট অপেক্ষা করলেও ডিবি প্রধান শিক্ষকদের সাথে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান।
বাংলাদেশের সামপ্রতিক সংকট উত্তরণের জন্য জনগণের ম্যান্ডেট দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য স্বল্প সময়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পক্ষে মত দেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গণতন্ত্রে সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে একটি প্রকৃত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। জনগণের নির্দেশনায় গণতন্ত্রের সমস্যার প্রতিকার সম্ভব। কারণ, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, সরকারে থাকা কিছু মানুষের জন্য নয়। এছাড়া বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড বন্ধে তিনি বিদেশিদের প্রতি সহায়তার আহ্বান জানান।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত শুক্রবার গভীর রাতে হাতিরঝিলের বাসা থেকে আটক করা হয় ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি বলেন, বিরোধীদের দমনে সরকার মধ্যযুগীয় নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে কল্পকাহিনী রচনা করা হচ্ছে।
তিন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়ার ঘটনাকে নজিরবিহীন ন্যক্কারজনক ঘটনা বলে আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি জানায় বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদ। এছাড়াও সিপিবির নারী সেল ও সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এবং বামপন্থী সাতটি ছাত্রসংগঠন মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট একই দাবি জানায়।