সৌদি আরবের জেদ্দায় আইপিএলের মেগা নিলামের প্রথম দিন গতকাল রোববার ঝড় ওঠলো যেন। আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হয়ে গেলেন ভারতীয় বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান ঋষভ পান্ত। পান্তের জন্য প্রথম বিডটা করল লাক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। তাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই চলল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর। পরে লাক্ষ্ণৌয়ের সঙ্গে লড়ল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ‘রাইট–টু–ম্যাচ’ নিয়মে পান্তকে নিতে চাইল তার পুরোনো দল দিল্লি ক্যাপিটালসও। কিন্তু এমন এক দাম বলল লাক্ষ্ণৌ, সেই দামে রাজি হলো না দিল্লি। ২৭ কোটি রুপিতে পান্তকে দলে নিল লাক্ষ্ণৌ। তাতেই আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হয়ে গেলেন তিনি। এর আগে ঝড় উঠেছে শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়েও। এই ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে ২৬ কোটি ৭৫ লক্ষ রুপিতে দলে নেয় পাঞ্জাব কিংস। তখন পর্যন্ত এটিই ছিল আইপিএল নিলামে কোনো ক্রিকেটারের সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়ার রেকর্ড। কিছুক্ষণ পরই সেটা ভেঙে দেন পান্ত। গত বছরের নিলামে আকাশচুম্বি দামে দল পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্ক। ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে তাকে দলে নিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। স্টার্কের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেন শ্রেয়াস ও পান্ত। এবার আর পান্তকে ধরে রাখেনি দিল্লি। ২ কোটি রুপি ভিত্তি মূল্যের ক্রিকেটারকে নিলামে ‘রাইট–টু–ম্যাচ’ নিয়মের ব্যবহার করে দলে নিতে চেষ্টা করেছিল তারা। এই নিয়মে কোনো ক্রিকেটারের নিলাম যখন শেষ হবে, তখন চাইলে ওই দামে তাকে নিয়ে নিতে পারবে তার পুরোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। ২০ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে শেষ হয়েছিল পান্তের নিলাম। তখন দিল্লি রাইট–টু–ম্যাচ নিয়মে তাকে দলে টানতে চায়। পরে ২৭ কোটি রুপি বিড করে লাক্ষ্ণৌ দলে ভেড়ায় দিল্লির সাবেক অধিনায়ককে। কদিন আগেই ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়না বলেছিলেন, এবারের নিলামে ২৫ থেকে ৩০ কোটি রুপি পাওয়া উচিত পান্তের। মারাত্মক এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে লম্বা সময় মাঠের বাইরে থাকার পর গত বছর আইপিএল দিয়ে মাঠে ফেরা এই ক্রিকেটার তেমন পারিশ্রমিকই পেলেন। গত আসরের শিরোপা জয়ী অধিনায়ক শ্রেয়াসকে ধরে রাখেনি কলকাতা। তবে নিলাম থেকে ২ কোটি রুপি ভিত্তিমূল্যের এই ক্রিকেটারকে নেওয়ার জন্য পাঞ্জাব কিংসের সঙ্গে কিছুক্ষণ লড়াই করে তারা। ১০ কোটি রুপি পর্যন্ত উঠে হাল ছেড়ে দেয়। পরে দৃশ্যপটে আসে দিল্লি। তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে জিতে শ্রেয়াসকে দলে টানে পাঞ্জাব। মারকিউ প্লেয়ারদের প্রথম ধাপের নিলামে পান্ত, শ্রেয়াসের সঙ্গে দল পেয়েছেন জস বাটলার, কাগিসো রাবাদা, স্টার্ক ও আর্শদিপ সিং। রাজস্থান রয়্যালস ছেড়ে নতুন ঠিকানায় খেলবেন ইংলিশ কিপার–ব্যাটসম্যান বাটলার। তাকে ১৫ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে দলে নিয়েছে গুজরাট টাইটান্স। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি ১০ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে কিনতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার রাবাদাকেও। আগের বছরের নিলামে রেকর্ড গড়া স্টার্ক এবার পেয়েছেন স্রেফ ১১ কোটি ৭৫ লাখ রুপি। তাকে দলে নিয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। রাইট–টু–ম্যাচ নিয়ে ভারতীয় পেসার আর্শদিপকে ১৮ কোটিতে দলে টেনেছে পাঞ্জাব। মারকিউ প্লেয়ারের দ্বিতীয় গ্রুপে থাকা ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি খেলবেন হায়দরাবাদের হয়ে। ১০ কোটি রুপিতে তাকে নিয়েছে দলটি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলারকে সাড়ে ৭ কোটিতে টেনেছে লাক্ষ্ণৌ। আর পাঞ্জাব ১৮ কোটি রুপিতে নিয়েছে ভারতীয় লেগ স্পিনার ইউজবেন্দ্র চেহেলকে। আইপিএল ইতিহাসে সবচেয়ে দামি স্পিনার এখন এই লেগি। সোয়া ১২ কোটিতে মোহাম্মদ সিরাজ যাচ্ছেন গুজরাটে। পৌনে ৯ কোটিতে লিয়াম লিভিংস্টোনকে নিয়েছে বেঙ্গালুরু। ১৪ কোটিতে দিল্লি টেনেছে লোকেশ রাহুলকে। দল পাননি ভারতীয় ব্যাটার দেবদূত পাডিক্কাল। এবারের নিলামে বিক্রি না হওয়া প্রথম ক্রিকেটার এই তরুণ ব্যাটার। মার্করামকে ভিত্তিমূল্যে ২ কোটিতে কিনেছে লক্ষ্ণৌ। ৬ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে চেন্নাইয়ে ফেরত গেছেন ডেভন কনওয়ে। ৩ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে চেন্নাই কিনেছে রাহুল থিপাঠিকে। ডেভিড ওয়ার্নারকে দলে নেয়নি কোনো ফ্যাঞ্চাইজি। গতকাল নিলামে তোলা দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অবিক্রিত থেকেছেন এই অজি ওপেনার। জেইক ফ্রেজারম্যাগার্কের দাম উঠেছে ৯ কোটি রুপি। তাকে রাইট টু ম্যাচ কার্ড ব্যবহার করে দলে নিয়েছে তার পুরোনো দল দিল্লি। ৮ কোটিতে হার্শাল প্যাটেলকে দলে নিয়েছে হায়দরাবাদ। আরটিএমে ৪ কোটিতে চেন্নাইয়ে ফিরেছেন রাচিন রবীন্দ্র। ৯ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে দলে ভিড়িয়েছে চেন্নাই। ২৩ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে ভেঙ্কেটেশ আইয়ারকে দলে নিয়েছে তে কলকাতা। এই অলরাউন্ডারকে নিয়ে বেঙ্গালুরু ও কলকাতার মধ্যে ভালোই লড়াই হয়েছে। ১১ কোটিতে মার্কাস স্টয়নিসকে দলে নিয়েছে পাঞ্জাব। ৩ কোটি ৪০ লাখে মিচেল মার্শকে পেয়েছে লক্ষ্ণৌ। ৪ কোটি ২০ লাখে গ্লেন ম্যাঙওয়েলকে নিয়েছে পাঞ্জাব। এই অজি অলরাউন্ডার এর আগে দুই দফায় পাঞ্জাবে খেলেছেন ৫ মৌসুম।