দীর্ঘ ১০ বছর পর আজ রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে চলছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার পাশাপাশি চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। দীপংকর তালুকদার ১৯৯৬ সাল থেকে টানা ২৬ বছর সভাপতি থাকার পর এবার তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিখিল কুমার চাকমা। এখনো পর্যন্ত কারো ব্যানার পোস্টার দেখা না গেলেও কে হচ্ছেন সভাপতি ও সম্পাদক এই নিয়ে নেতা কর্মীদের মধ্যে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। কাউন্সিলকে ঘিরে নেতা কর্মীদের মাঝে চলছে ব্যাপক জল্পনা, কল্পনা। ১৯৯৬ সন থেকে টানা ২৬ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। এই ২৬ বছরে তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেউ সাহস পাননি। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে কয়েকবার সংসদ সদস্য ও সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এবার কাউন্সিলের পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ায় সভাপতি পদে দাঁড়াচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সচিব পদ মর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা। নিখিল কুমার চাকমা ইতিপুর্বে নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এদিকে সভাপতি পদের মত সাধারণ সম্পাদক পদেও ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন।
এদিকে বিগত সময়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের আচার আচরণ ও দলীয় নেতা কর্মীদের সুযোগ সুবিধা ভোগ করা এবং ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত রাখা এসব নিয়ে চলছে হিসাব নিকাশ চলছে। কাউন্সিলকে ঘিরে এখনো পর্যন্ত কারো ব্যানার পোস্টার দেখা না গেলেও সামাজিক মাধ্যমে চলছে অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীদের বিভিন্ন পক্ষ বিপক্ষের প্রচারণা।
কাউন্সিলরদের কেউ কেউ পুরাতন নেতৃত্বকে বেছে নিতে চান, তাদের দাবি দীপংকর তালুকদার পার্বত্য এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর উন্নয়নের প্রতীক। অন্যদিকে দলের মধ্যে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা, অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ নেতা কর্মী বান্ধব নেতৃত্ব চান কেউ কেউ। এদিকে, ত্রি বার্ষিক সম্মেললকে ঘিরে অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরাও উজ্জীবিত।
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জমির উদ্দিন বলেন, সম্মেলনে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব বিকশিত হয়। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররা পরিবর্তনের পক্ষে মত দিবে বলে আমি মনে করি। জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য গবেষণা সম্পাদক রফিকুল মওলা বলেন, সম্মেলনে আবারো দীপংকর তালুকদার ও মুছা মাতব্বর আবারো সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবে মনে আমি মনে করছি।
এদিকে, ত্রি বার্ষিক সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর বলেন, বিগত দশ বছরে রাঙামাটি ও বাঘাইছড়ি পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদগুলোর নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করেছি, সুখ দু:খে নেতা কর্মীদের পাশে ছিলাম, তাই আশা করি কাউন্সিলরা ভোট দিবেন।
অপর প্রার্থী কামাল উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি বলেন, এবার যদি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই তাহলে সবাইকে নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করব।
এদিকে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সভাপতি পদ নিয়ে, ১৯৯৬ সনে দীপংকর তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হয়ে আসছিলেন, এবার তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন দলের সহ সভাপতি নিখিল কুমার চাকমা, বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, সম্মেলন মানে দলের প্রাণ, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে কর্মতৎপরতা বাড়ে। সম্মেলনে একটি পদে একাধিক প্রার্থী দাঁড়াতে পারে, এটা স্বাভাবিক। এতে প্রমাণিত হয় আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল, নির্বাচত সভাপতি ও সম্পাদকরা আওয়ামীলীগকে আগামীতে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। এ প্রতিযোগিতাকে আমি স্বাগত জানাই।
সভাপতি পদের অপর প্রার্থী নিখিল কুমার চাকমা বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে এটা স্বাভাবিক। আবার নেতৃত্ব কে দিবে সেটা কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নিবে। রাঙামাটির আওয়ামীলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ২০১২ সনের ৮ ডিসেম্বর। তবে দেখার পালা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পুরাতন মোড়কে নতুন নেতৃত্বে আসছে নাকি নতুন চমক আসছে।
আজ সকাল ১০ টায় রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে উদ্বোধক থাকবেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি, বিশেষ অতিথি থাকবেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খানম এমপি ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।