একনেকে সদ্য পাশ হওয়া চট্টগ্রাম বন্দরের মেগা প্রকল্প বে টার্মিনালের প্রয়োজনীয় ২৬৭ একর ভূমি নিয়ে আবার জটিলতা শুরু হয়েছে। বনবিভাগ বলছে, জায়গাটি সংরক্ষিত বন। অপরদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সেখানে বনের কোনো চিহ্ন নেই। নেই কোনো গাছপালা। জোয়ারের সময় জায়গাটি সাগরের পানিতে তলিয়ে থাকে। বে টার্মিনাল প্রকল্পের আওতায় মাটি ভরাট করে জায়গাটি উঁচু করে ব্যবহার করতে চায় বন্দর। তবে বনবিভাগের দাবি, ঝড়–জলোচ্ছ্বাস এবং বালি উত্তোলনসহ নানা কারণে ওখানে বনায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বনবিভাগ জায়গাটিতে নতুন করে ম্যানগ্রোভ বন সৃজনের কাজ শুরু করবে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) মেগা প্রকল্প বে টার্মিনাল। ইতোমধ্যে বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট একনেকের অনুমোদন লাভ করেছে। ১৪ হাজার ৯০৯ কোটি টাকার বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দেবে ১০ হাজার ২৭২ কোটি টাকা এবং সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। চলতি বছর এর আনুষ্ঠানিক কাজ শুরুর কথা রয়েছে। চার বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বে টার্মিনালের প্রয়োজন প্রায় আড়াই হাজার একর ভূমি। এর মধ্যে খাস খতিয়ানভুক্ত ৫০০ দশমিক ৭ একর জায়গা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৬ দশমিক ৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন আরো ১৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ নিয়ে মামলা চলছে। এছাড়া ১ হাজার ৬২০ একর জমি সমুদ্র থেকে রিক্লেইম করে উদ্ধার করবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে হালিশহর মৌজায় ৫১ দশমিক শূন্য ৮৫ একর এবং দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় দুটি দাগে ৬৬ ও ১৫০ একরসহ মোট ২৬৭ দশমিক শূন্য ৮৫ একর জমিও রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এই জমি সমুদ্র থেকে রিক্লেইম করবে বললেও বনবিভাগ বলছে, এই জমি তাদের সংরক্ষিত বন। সমুদ্র উপকূলবর্তী এই জমিটিতে বনবিভাগ ম্যানগ্রোভ বনায়ন করতে চাইছে। এ নিয়ে সরকারের দুই সংস্থার মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছে।
বন বিভাগ বলেছে, এসব জমিতে ১৯৭৮–৭৯, ২০০৫–০৬ ও ২০০৭–০৮ অর্থবছরে ম্যানগ্রোভ বন সৃজন করা হয়। সেগুলো ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, যা ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়সহ বঙ্গোপসাগরের তীরে বালুচর জমে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বালি ভরাট করায় বাগান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন বিভাগ ওই জমিটি নিজেদের হাতে রাখতে দ্রুত ম্যানগ্রোভ বন সৃজনের কাজ শুরু করতে চাইছে। এই বন নগরীর উপকূলীয় এলাকার জান–মাল রক্ষায় অত্যন্ত জরুরি বলে তারা মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক চিঠি আদান–প্রদানের কথা স্বীকার করে বলেন, ওই জায়গাটি পানির নিচে থাকে। ভাটার সময় কেবল জায়গাটি দেখা যায়। যেটা রিক্লেইমের মাধ্যমে সমুদ্র থেকে তুলে আনা হবে। ওখানে কোনো বন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বে টার্মিনাল সরকারের প্রায়োরিটি প্রজেক্ট, বন্দরের মেগা প্রকল্প। এটার সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ ও দেশের আগামীর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ইমেজ জড়িত। তাই বন বিভাগ বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।