নগরের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পৌরকর (গৃহকর ও রেইট) খাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বকেয়া আছে ২৫৮ কোটি ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫২৪ টাকা। যা সাধারণ ভবন মালিকের কাছে ধার্যকৃত পৌরকরের প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ ব্যক্তি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের চেয়েও সরকারি প্রতিষ্ঠানের গৃহকর না দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এ অবস্থায় বকেয়া পৌরকর আদায়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হচ্ছে চসিক। এর অংশ হিসেবে পৃথক ২৮টি মন্ত্রণালয়ে ৩১টি চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব বরাবর পাঠানো এসব চিঠিতে বকেয়া পৌরকর পরিশোধের জন্য অধীনস্থ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ মঞ্জুরি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়।
চসিকের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ না করলে তা সাধারণ মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। তাছাড়া আর্থিক সংকট থাকায় সরকারি সহায়তা ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করলে আর্থিক সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে। এতে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় কেবল মন্ত্রণালয়ের সাহায্যের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে না। এমনকি সাধারণ হোল্ডিং মালিকদেরও চাপ দিতে হবে না। চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পাওনা পৌরকরের টাকা পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও দপ্তর প্রধানের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ এবং যথারীতি পৌরকর দাবি বিল জারি করা হয়। তবে নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পৌরকর পরিশোধ করা যাচ্ছে বলে জানানো হয়। তাই ওইসব প্রতিষ্ঠান যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে আমরা চিঠি দিয়েছি।
জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন অ্যাক্ট ২০০৯ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই চসিক মোট ১৭ শতাংশ পৌরকর আদায় করে থাকে। তার মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাঙ (গৃহকর), ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন রেইট এবং ৭ শতাংশ আর্বজনা অপসারণ রেইট রয়েছে।
নগরবাসীর সার্বিক সেবা প্রদান নিশ্চিতকল্পে সিটি কর্পোরেশনে নিয়োজিত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বাৎসরিক বেতন–ভাতাদি পরিশোধ, নগরীর আবর্জনা অপসারণ, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ, সড়ক আলোকায়ন, শিক্ষা সেবা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি বহুমুখী কর্মকাণ্ডের সিংহভাগ ব্যয় পৌরকর থেকে নির্বাহ করা হয়।
মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বকেয়ার পরিমাণ : চসিকের রাজস্ব শাখার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে নগরে ১ হাজার ৫১৬টি সরকারি হোল্ডিং রয়েছে। এসব হোল্ডিংয়ের বিপরীতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ২০২৩–২০২৪ পর্যন্ত চসিকের পাওনা ছিল ২০১ কোটি ৫১ লাখ ৮ হাজার ৮৩ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চলতি অর্থবছরের (২০২৪–২০২৫) ৫৬ কোটি ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার ৪৪১ টাকা হাল দাবি।
মন্ত্রণালয়ের দেয়া চিঠির তথ্য অনুযায়ী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে চসিকের পাওনা ৫০ কোটি ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫৮৩ টাকা। একইভাবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে পাওনা এক কোটি ১২ লাখ ৩ হাজার ২৬৯ টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জননিরাপাত্তা বিভাগের কাছে ৯ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার ৫৩৬ টাকা এবং সুরাক্ষা সেবা বিভাগের কাছে ১৮ লাখ ৪ হাজার ৪৪৪ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৭১ টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের কাছে ১৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ২৬৭ টাকা এবং কারিগরী ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ৫৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৪ টাকা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি ৭২ লাখ ৪২ হাজার ১০ টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কাছে ৭ কোটি ৪২ লাখ ৫১ হাজার ১১৭ টাকা, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ৮১ লাখ ১৫ হাজার ২৬৮ টাকা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ টাকা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ৮৮ লাখ ৪৬ হাজার ১৫৪ টাকা, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ২২২ টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে এক কোটি ১২ লাখ ৫৯ হাজার ৯১৯ টাকা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে ৪৯ লাখ ৯২ হাজার ৭৫০ টাকা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কাছে ১৮ লাখ ১২ হাজার ৮৮০ টাকা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৪২ টাকা, ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে দুই কোটি ৭০ লাখ ৯৬ হাজার ২১১ টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে ২১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৪ টাকা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ৪১ হাজার ৮৩৫ টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১১ লাখ টাকা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪৮ লাখ টাকা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫৪ লাখ টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৯০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে পাওনা ১৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা।