২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রাক্কলন করা হচ্ছে

শহরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আমি কোনো ভাঙা সড়ক দেখতে চাই না : মেয়র দেওয়ানহাট ব্রিজ পুনর্নির্মাণ বা বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

শহরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রাক্কলন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এছাড়া বর্তমানে ৩৬ টি প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়ন করা হচ্ছেও বলেও জানান তিনি। মেয়র বলেন, শীঘ্রই ৪০ থেকে ৫০ টি সড়ক ও ফুটওভারব্রিজ এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হবে। আমি নগরে কোনো ভাঙা সড়ক দেখতে চাই না।

তিনি গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত চসিকের প্রকৌশল বিভাগের সমন্বয় সভায় এসব কথা বলেন। টাইগারপাস নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। খুলশীসহ শহরের অন্যান্য এলাকায় সড়কের যে অংশে রেললাইন গেছে সেখানে ওভারপাস করার জন্য ডিপিপি করা হবে। ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে সিটি কর্পোরেশনের এমন ভবন, বিশেষ করে ঝুঁকিতে থাকা স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল ভবন নতুন করে নির্মাণে ডিপিপি প্রস্তুত করা হবে। এছাড়া ভাঙা সড়ক সংস্কারেও আলাদা করে ডিপিপি প্রস্তুত করতে বলেছি।

এদিকে সভায় উপস্থিত একাধিক প্রকৌশলী আজাদীকে জানান, সভায় নগরের দেওয়ানহাট ব্রিজ পুর্ননির্মাণ বা বিকল্প কিছু করা যায় কীনা সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া ওয়াসার সড়ক কাটাকাটি ও রাস্তায় থাকা পিডিবি’র বিদ্যুৎ পোল নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও সমন্বিত করতে সভা আয়োজন করা হয়। মেয়র চসিকের পৃথক ছয়টি জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীদের কাছ থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য নেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এসময় তিনি প্রধান প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের মতামত গ্রহণ করে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনায় গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় মেয়র দেওয়ানহাট ব্রিজ সম্পর্কে জানতে চান প্রকৌশলীদের কাছে। তখন সংশ্লিস্ট প্রকৌশলী বলেন, ব্রিজটি অনেক পুরনো। প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ট্রাফিক ডাটা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিদিন কত গাড়ি ব্রিজটির উপর দিয়ে চলাচল করে তা যাচাই করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্রিজটি পুর্ননির্মাণ বা বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তখন মেয়র প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে নির্দেশনা দেন।

ওয়াসা ও পিডিবি প্রসঙ্গে : ওয়াসার চলমান স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য রাস্তা কাটাকাটি করা সৃষ্ট জনদুর্ভোগের বিষয়টিও উঠে আসে সভায়। এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ওয়াসার স্যুারেজ প্রকল্পের কারণে যাতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় তা নিশ্চিত নিশ্চিত করতে হবে। ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কারণে যেন শহরের সড়ক ব্যবস্থায় ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সেই বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। প্রকল্পের মূল ডিপিপি সংগ্রহ করতে হবে এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে যোগাযোগ রেখে কোন সড়ক তারা কাটবেন তা আগে থেকেই জানতে হবে।

এসময় কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, অতীতে সমন্বয়হীনতার জন্য সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বানানো অনেক নতুন রাস্তা ওয়াসা কেটে ফেলেছে। এখন ওয়াসা কোতয়ালীর আশপাশের এলাকাগুলোতে রাস্তা কাটতে চাচ্ছে, সেগুলো অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। হঠাৎ করে এসব রাস্তা কাটলে তীব্র যানজট তৈরি হবে। রাস্তা কাটার প্রয়োজন হলে তা যেন এমন সড়কে করা হয় যেখানে চসিকের নতুন রাস্তার কাজ করা হয়নি। এলোমেলোভাবে রাস্তা কাটা যাবে না এতে জনদুর্ভোগ বাড়ে।

সভায় পিডিবি’র বিদ্যুৎ পোল এবং লাইনের কারণে ফুটওভার ব্রিজ ও সড়কে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় বলে জানান প্রকৌশলীরা। তখন মেয়র এ বিষয়ে পিডিবির সাথে দ্রুত যোগাযোগ করার নির্দেশনা দিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করতে বলেন। ডা. শাহাদাত প্রকৌশলীদের বলেন, কোথাও কাজ করতে গিয়ে যদি স্থানীয়ভাবে কোনো বাধার মুখোমুখি হন সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাঠ করার পরিকল্পনা : ডা. শাহাদাত বলেন, মহসিন কলেজের মাঠ যেভাবে সংস্কার করে খেলার উপযোগী করা হচ্ছে সেভাবে আরো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ উন্নত করে দিব। চট্টগ্রাম কলেজের প্যারেড মাঠসহ যেসব সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের পতিত জায়গা রয়েছে সেগুলোকে উন্নয়ন করে জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বলেন, ৪১টি ওয়ার্ডে যে ৪১টি মাঠ করার প্রতিশ্রুতি ছিল আমার। ইতোমধ্যে ১১টি মাঠের উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আছে সেগুলো দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম, মোহাম্মদ শাহীনউল ইসলাম চৌধুরী, জসিম উদ্দিন, আবু সাদাত মো. আবু তৈয়ব, নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম, ফারজানা মুক্তা, রিফাতুল করিম, তাসমিয়া তাহসিন, মাহমুদ শাফকাত আমিন, শাফকাত বিন আমিন ও তৌহিদুল ইসলাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅভিযান দেখে পালালেন প্রসাধনী ব্যবসায়ীরা
পরবর্তী নিবন্ধবিজয় দিবসে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রত্যয় বাংলাদেশের