২৪ সাবেক মন্ত্রী এমপির বিষয়ে ব্যবস্থা চায় দুদক

বিদেশি নাগরিকত্ব

| মঙ্গলবার , ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে যারা মন্ত্রীএমপি হয়েছেন, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চিঠিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তা দুদককে অবহিত করতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুদকের পরিচালক মো. রফিকুজ্জামান চিঠি দুটি পাঠিয়েছেন।

মো. রফিকুজ্জামান বলেন, বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে এখন পর্যন্ত ২৪ জন এমপিমন্ত্রী হয়েছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, ওই ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক। তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। নাগরিকত্বের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। সেজন্য তাদেরকে চিঠি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের। নির্বাচন কমিশনের সচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লেখা দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘২৪ জন মন্ত্রীএমপির দ্বৈত নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্স কার্ড থাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে গৃহীত ফলাফল দুর্নীতি দমন কমিশনকে অবহিত করার জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। চিঠিতে আরো বলা হয়, বর্ণিত ২৪ জন মন্ত্রীএমপিসহ অন্যান্য মন্ত্রীএমপিদের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্স কার্ড (যদি থাকে) থাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে গৃহীত ফলাফল দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হতে পারেন না। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব রয়েছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বেলজিয়ামের ‘রেসিডেন্স কার্ড’ রয়েছে। তাদের মধ্যে সালমান কারাগারে থাকলেও হাছান মাহমুদ আছেন বেলজিয়ামে। সাবেক পাঁচজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব রয়েছে। এরা হলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল, মো. তাজুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং মো. মাহবুব আলী। মাহবুব আলী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বা গ্রিন কার্ডধারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন সাবেক চারজন মন্ত্রীপ্রতিমন্ত্রীসহ মোট সাতজন সংসদ সদস্য। তারা হলেন আব্দুস শহীদ, নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহমেদ পলক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ), মাহফুজুর রহমান এবং সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। তাদের মধ্যে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে ‘জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ’ ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এরই মধ্যে মামলা করেছে দুদক।

কানাডার নাগরিকত্বধারী হিসেবে ছয়জনের নাম এসেছে, তারা হলেন আবদুর রহমান, মাহবুব উল আলম হানিফ, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (নাসিম), শামীম ওসমান, শফিকুল ইসলাম (শিমুল) এবং হাবিব হাসান। সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব রয়েছে। সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম জাপানে থাকার অনুমতি (রেসিডেন্স কার্ড) পেয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান (টাঙ্গাইল) জার্মানির নাগরিক এবং এম এ ওয়াহেদ (ময়মনসিংহ১১) পাপুয়া নিউগিনির নাগরিক।

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসা ২৪ জনের মধ্যে পাঁচজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। বাকিদের ৫ আগস্টের পর থেকে হদিস মেলেনি, অনেকে গোপনে দেশত্যাগ করেছেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী এমপির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। কয়েকজনের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে মামলাও দায়ের করেছে সংস্থাটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় বালুখেকোদের হামলায় আহত ১০
পরবর্তী নিবন্ধদেশের মঙ্গলের জন্য দ্রুত নির্বাচন দরকার : খসরু