কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই (বুধবার) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘চিরুনি অভিযান’ অব্যাহত রাখে। টানা পঞ্চম দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল, তবে এদিন তা শিথিল রাখা হয়।
২৪ জুলাই সারাদেশে আন্দোলনকারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ৬৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে গত ৮ দিনে (১৭–২৪ জুলাই) সারাদেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে চার হাজার। রাজধানীতে মোট ১ হাজার ৭৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার করা হয় মোট ৭০৩ জনকে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী। (সূত্র : প্রথম আলো, ২৫ জুলাই, ২০২৪)।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎকালীন ডিবি প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখেই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। খবর বাসসের।
৫ দিন পর ২৪ জুলাই রাতে সারাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করে বিটিআরসি। তবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মেট্রোরেল এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ রাখা হয়। এদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয় বলে দুজনই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান।
ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়ে এদিন চিকিৎসাধীন আরও চারজনের মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন ও সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও পরবর্তী সংঘাতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ২০১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এ মৃত্যুর হিসাব হাসপাতাল, হাসাপাতালে মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ঢাকাসহ তিন জেলায় বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। অন্যান্য জেলায়ও জেলা প্রশাসকদের নির্ধারিত কয়েক ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকে। এদিন সরকারি অফিস ও ব্যাংক চার ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়। আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ–র্যাবের পাশাপাশি রাস্তায় সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও টহল অব্যাহত ছিল। এছাড়াও এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকরা।
কারফিউ শিথিল হওয়ায় এদিন রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়। ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। এদিন অফিস–আদালত ও কলকারখানায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার যেসব স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে মেট্রোরেলসহ কয়েকটি স্থাপনা সরকারের উদ্যোগে বিদেশি কূটনীতিকদের সরেজমিনে পরিদর্শন করানো হয়।
এ বিষয়ে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, মোট ৪৯টি মিশনের প্রতিনিধিরা ধ্বংসযজ্ঞ চালানো কয়েকটি স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন। তাদের মধ্যে ২৩ জন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। কূটনীতিকদের মেট্রোরেলের ধ্বংসযজ্ঞ, সড়ক ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিটিভি ভবন দেখিয়েছি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ জুলাই ৬ জন নিহতের ঘটনা তদন্তে ২৪ জুলাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর বিষয়ে জানতে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনগণের কাছে তথ্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তদন্ত কমিটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার কথা জানায় এই কমিটি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় নিহত আটজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পড়ে থাকা মরদেহগুলো বুধবার বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুষ্কৃতকারীরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, জনমনে স্বস্তি না ফেরা পর্যন্ত কারফিউ চলবে।