রাঙ্গুনিয়ায় ঘরে ঢুকে আমির হোসেন (৬৫) ও তার স্ত্রী জুলেখা বেগমকে (৬০) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন নিহতদের মেয়ে মনি আক্তার। মামলায় কামাল–তোফায়েল বাহিনীর প্রধান সরফভাটা গঞ্জম আলী সরকার বাড়ির আবুইল্যার ছেলে কামাল প্রকাশ গলাকাটা কামাল (৪০) এবং তার ভাই তোফায়ের আহম্মদ ওরপে তোলাইয়্যে (৪৩) সহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০–১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছৈয়দুরখীল গ্রামের ফজল বাপের বাড়িতে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় নিহত এই দম্পতির পুত্র জসিম উদ্দিন (৩৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি এখনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার এসআই মো. রিয়াজ জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত মামলার এজাহার নামীয় তিনজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন কায়কোবাদ মঞ্জু (৪২), দিদার (৩০) ও বাবর আলম (৩২)। তাদের সবার বাড়ি সরফভাটায়। তাদের গতকাল বুধবার দুপুরে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মামলার এজাহার ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মনি আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি কামাল ও তোফায়েলের বড় ভাই উকিল আহমদ খুন হওয়ার পর থেকে তাদের পরিবারের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল এবং বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল তারা। ঘটনার দিন রাতে ২০–২৫ জনের একটি দল বন্দুক, ধারালো কিরিচ, দা, লোহার খুন্তি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ঘরে প্রবেশ করে। তারা প্রথমে বৃদ্ধ আমির হোসেন, তার স্ত্রী জুলেখা বেগম ও তাদের ছেলে জসিম উদ্দিনের হাত–পা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর বৃদ্ধ আমির হোসেনের বাম পায়ে গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে সারা শরীরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। একইভাবে জুলেখা বেগম ও তার ছেলে জসিমকেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। এমনকি পেরেক দিয়ে গুতা মেরে এই তিনজনের চোখসহ সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত করে সংঘবদ্ধ এই সন্ত্রাসী দল। এসময় তাদের মেয়ে মনি বাধা দিলে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরে আহত তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হলে সেদিন রাত ৩টার দিকে বৃদ্ধ আমির হোসেন এবং পরদিন বেলা ১২টার দিকে জুলেখা বেগম মারা যান।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, একাধিক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা গলাকাটা কামাল ও তোফায়েলের বড় ভাই উকিল আহমদ হত্যার ঘটনার অন্যতম আসামি ছিল খুনের শিকার আমির–জুলেখা দম্পতির সন্তান সাইফুল। তিনি এই ঘটনায় ২০১৮ সালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়ে এখনো জেলে রয়েছেন। এই খুনের বদলা নিতেই সাইফুলের পরিবারের উপর এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ড ছাড়াও শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল ও গলাকাটা কামাল বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সরফভাটায় একাধিক খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। তাদের কারণে মীরেরখীল ও আশেপাশের অনেক পরিবার অতিষ্ট হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। তারা খুনসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেই সরফভাটার গহিন পাহাড়ে পালিয়ে যায়। তাই তাদের ধরতে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার পাশাপাশি, বোয়ালখালি, পটিয়া, চন্দনাইশসহ আশেপাশের থানা পুলিশের যৌথ অভিযান দাবি করেছেন স্থানীয়রা। এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে উল্লেখ করে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করেন সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।












