চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো চট্টগ্রাম ওয়াসা। ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ ইতোপূর্বে বলেছিলেন, রাঙ্গুনিয়ার শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ চালু হলে চট্টগ্রাম ওয়াসায় পানির উৎপাদন আরও ১৪ কোটি লিটার বাড়বে। তখন দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানির সরবরাহ হলে পানির চাহিদা শতভাগ পূরণ হবে। এতে করে ২৪ ঘণ্টাই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যাবে। আগামী ২০২১ সালের ১৭ মার্চের আগেই আমরা এই সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারব।
এদিকে, মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি সরবরাহ প্রকল্পে উৎপাদিত দৈনিক সাড়ে ৪ কোটি লিটার পানি আজ শনিবার থেকে পেতে যাচ্ছে ইপিজেড-বন্দর-পতেঙ্গাবাসী। আজ উদ্বোধন হচ্ছে ‘পতেঙ্গা বুস্টিং পাম্প স্টেশন’। এর মধ্য দিয়ে বন্দর-পতেঙ্গা ও ইপিজেড এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের পানি হাহাকার ঘুচতে যাচ্ছে। এখন থেকে নিয়মিত পানি যাবে ইপিজেড-বন্দরসহ পতেঙ্গার সর্বশেষ প্রান্ত পর্যন্ত। দৈনিক আজাদীতে গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নগরীর সর্ব দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থান পতেঙ্গা উপকূলীয় এলাকার। এই এলাকায় এতদিন ওয়াসার পাইপ লাইন থাকলেও এলাকাবাসী নিয়মিত পানি পেত না। পানির জন্য সারাবছরই হাহাকার লেগে থাকত। এর প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম ওয়াসা চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের অধীনে মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্পটি গ্রহণ করে। মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে। এই প্রকল্পের অর্ধেক পানি (সাড়ে ৪ কোটি লিটার) ইপিজেড-বন্দর ও পতেঙ্গা এলাকায় সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। অবশিষ্ট অর্ধেক পানি (সাড়ে ৪ কোটি লিটার) বহদ্দারহাট থেকে আন্দরকিল্লা-বাকলিয়া-খাজা রোড, ডিসি রোড, খাতুনগঞ্জ, কালামিয়া বাজার এবং বহদ্দারহাট থেকে তেলেপট্টি মোড়, আরাকান হাউজিং সোসাইটি-চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা হয়ে মোহরা পর্যন্ত যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
বিশুদ্ধ পানি সব ধরনের মানবাধিকারের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত। সবার জন্য উন্নত উৎসের পানি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, ৯৭ শতাংশের বেশি মানুষের উন্নত উৎসের পানি পাওয়ার সুযোগ আছে। তবে পুরোপুরি নিরাপদ পানি পানের সুযোগ এখনও সীমিত, মাত্র ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তাতে বলা হয়েছে, অগ্রগতি সত্ত্বেও এক কোটি ৯৪ লাখ মানুষ এখনও সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে থাকা আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। এছাড়া পানিতে ম্যাঙ্গানিজ, ক্লোরাইড ও লৌহ দূষণের কারণেও খাওয়ার পানির মান খারাপ থাকে। বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ পানির উৎসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি মাত্রায় ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি পাওয়া যায়। মলের জীবাণু রয়েছে এমন উৎসের পানি পান করছে ৪১ শতাংশের বেশি মানুষ। এক্ষেত্রে স্বল্প শিক্ষিত নগরবাসী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জরিপে বলা হয়েছে। শহরাঞ্চলের এসব পরিবারে যে পানি খাওয়া হয় তার এক তৃতীয়াংশেই উচ্চমাত্রার ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া থাকে, যা ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, উৎস থেকে বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহের সময় এতে আরও বেশি ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া চলে যায়। প্রতি পাঁচটি পরিবারের মধ্যে দুটি, অর্থাৎ বাংলাদেশের ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া দূষিত উৎসের পানি পান করে। আবার ঘরের কল বা টিউব-ওয়েলের আশপাশ পরিষ্কার না থাকায় বিভিন্ন অণুজীবযুক্ত পানি পানকারীর সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় নয় কোটি ৯০ লাখ। সেক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ব্যাপক অগ্রগতি লক্ষ করা যায় চট্টগ্রাম ওয়াসার।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামবাসীর সুপেয় পানির ঘাটতি লাগবে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এর ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মেশিনারিজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের চীনা ও আমেরিকার সুপারভাইজাররা চূড়ান্ত কমিশনিং করার পর এটি উৎপাদনে যাবে বলে আশা করছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। ২০২০ সালের জুনে এটি চালু হওয়ার প্রাথমিক সময় নির্ধারণ করা হলেও করোনার কারণে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিকরা কাজে যোগ না দেওয়ায় এটির নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যায়। পরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলে কাজের গতি ফিরে আসে। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। চলছে ট্রায়াল রান। চলতি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ট্রায়াল রান শুরু হয়। আমরা চাই, ২৪ ঘণ্টা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।