নানা পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি অন্তর্র্বর্তী জাতীয় সরকারের প্রস্তাবনা বা রূপরেখা ঘোষণা করা হবে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর অন্তর্র্বর্তী সরকার নিয়ে আলোচনার মধ্যে গতকাল সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, ছাত্র–নাগরিকের সমর্থিত কিংবা প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া আমরা কোনো ধরনের সরকারকে সমর্থন করব না। সেটা সেনা সমর্থিত সরকার হতে পারে কিংবা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার হতে পারে। এমন সরকারকে ছাত্র–জনতা গ্রহণ করবে না। খবর বিডিনিউজের।
বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। এর মধ্যেই তেজগাঁওয়ের একটি ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে নাহিদ বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই অন্তর্র্বতীকালীন সরকারে কারা কারা থাকবেন তা আমরা প্রকাশ করব। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে হবে না, আমরা তাকে বিচারের আওয়তায় আনব। শেখ হাসিনার পদত্যাগেই একমাত্র সমাধান নয়। পিলখানা হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুম, হত্যা, মানবাধিকার লংঘন ও ভোটাধিকার লংঘনের মত নানা রকম অপরাধের সঙ্গে এ সরকার জড়িত। এছাড়া যারা ফ্যাসিবাদে সহায়তা করেছে, তাদেরকেও বিচারের আওয়তায় আনা হবে।
নাহিদ বলেন, রাষ্ট্রপতি এই ফ্যাসিবাদ সরকারের একটি অংশবিশেষ। তাই তিন সমন্বয়কারী সঙ্গে আলোচনা করেছে। দরকার হলে আমরা আবার আলোচনা করব। ফ্যাসিবাদ সরকারই এক দফা দাবিতে যাওয়ার জন্য বাধ্য করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্র–জনতার অংশগ্রহণে একটি সফল অভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব হয়েছে। তাতে শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করেছি। আমরা মনে করি, এই দেশে যেন আর শেখ হাসিনার মত ফ্যাসিবাদ শাসক তৈরি না হয়। আর ফ্যাসিবাদ সরকার থাকলে শেখ হাসিনার মত নেতৃত্ব তৈরি হতে পারে। যারা ফ্যাসিবাদ শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করবে তাদের ওপর নজর রাখতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কাঠামোর মধ্য দিয়ে এ ধরনের ফ্যাসিজম তৈরি হয়, সে কাঠামো বিলোপ করে একটি নতুন রূপরেখা তৈরি করতে হবে। তাই আন্দোলনের প্রথম ধাপ ছিল শেখ হাসিনার পতন। তাই আমরা এখন আমাদের আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপের দিকে যেতে হবে।
সব ধরনের সহিংসতা–বিশৃঙ্খলা পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের সুযোগে নানা জায়গায় নানা রকমের সহিংসতা চলছে। সেটা যাতে না হয় আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ দেশ ও সম্পদ আমাদের সকলের। তাই কোনো রকমের লুটপাট করা যাবে না। আর কোনো ধরণের সহিংসতাকে মেনে নেওয়া যাবে না। তাই এ বিষয়ে ছাত্র জনগণকেই সতর্ক থাকতে হবে। কোনো রকমের সহিংসতা চাই না। আমরা রাস্তায় শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করব।
এর আগে আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা আন্দোলন শুরু করেছিলাম কোটা বৈষম্যের স্থায়ী সমাধানের দাবিতে। ১৬ বছর ধরে এ দেশে এক ধরনের ফ্যাসিবাদ শাসন চলেছে। বাংলাদেশের কোনো আন্দোলনে এত হতাহত হয়নি। সব কারাবন্দীকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।