নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার মূল ফটকের সামনে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ডিসি, এসপির প্রত্যাহারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় তিনি তার ছেলে তাশিক মির্জা কাদেরের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে এসব কথা বলেন।
এদিকে গতকাল বিকেলে তার অনুসারী স্বপন মাহমুদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে কাদের মির্জা বলেন, ওবায়দুল কাদের আজকে আমার বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছেন, সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়েছেন। তিনি তার দুর্নীতিবাজ স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য ব্যস্ত। তবে বাঁচাতে পারবেন না, কোনো সুযোগ নেই।
ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তোমার কারণে আমার একটা ভাই ফাঁসি দিয়ে মারা গেছে। আজকে তোমার স্ত্রী হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তোমার শ্বশুর পক্ষের লোকজন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। আমার কর্মীদের চাকরি দেবে বলেছিলে, আজকে একজন কর্মীরও চাকরি হয়নি। খবর বাংলানিউজের।
আল্টিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা সময় দিলাম। এ সময়ের মধ্যে ডিসি, এসপি, এডিশন্যাল এসপি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি, পরিদর্শককে (তদন্ত) ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খিজির হায়াত খান, সাধারণ সম্পাদক নুরনবী, রুমেল, সবুজ, কচি, শাহীন চেয়ারম্যান, আব্দুর রাজ্জাক চেয়ারম্যানকে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনা না হলে কোম্পানীগঞ্জে শান্তি আসবে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি এটার কিছু না হয়, তাহলে ২৪ ঘণ্টা পরে আমি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নামব। এ সময় তিনি তার আটক অনুসারী সাবেক কাউন্সিলর শিমুলকে এক ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ারও দাবি জানান।
তিনি বলেন, পুলিশের সামনে বসে পকেটে অস্ত্র, এ কোন দেশ, এ দেশে কি আইনের শাসন নেই, ইউএনওর সামনে বসে পকেটে অস্ত্র, এ দেশে কি আইনের শাসন নেই, মানবাধিকার সংস্থা নেই। আজকে আমাকে ফেসবুকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। অথচ আমার প্রতিপক্ষরা ফেসবুকে কথা বলতে পারতেছে। আমি পারতেছি না। এগুলো কে করেছে, ওবায়দুল কাদের সাহেব, তার বউয়ের অপকর্মকে ঢাকার জন্য। সেই এগুলো করতেছে। না হলে কে করতেছে?
আজকে তারা আমার পরিবারকে ধ্বংস করতে চায়। ওসি তুমি মিথ্যা কথা বলো। মুনাফিক ১০ লাখ টাকা খেয়ে আজকে প্রতারণা করছ। তুমি আমার ছেলেদের জেলে দেওয়ার ভয় দেখাও। তোমাকে এ সাহস কে দিয়েছে? বাজে লোক, যোগ করেন তিনি।
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, সাবধান, সাবধান, সাবধান করে দিচ্ছি তোমাদের। আমাকে চিন না, চিন না, চিনবা পরে। আমি কারো তোয়াক্কা করি না, আল্লাহ ছাড়া। জনগণ ছাড়া কাউকে ভয় করি না। আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। আমার পরিবার প্রয়োজনে এ পথে নিজেদের বিসর্জন দেব। তারপরও কোনো অপরাধী, অপরাজনীতি, সন্ত্রাসী, অস্ত্রবাজ, ঘুষখোর সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো আপোস করব না।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে আবদুল কাদের মির্জা ও বাদল অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেলে কোম্পানীগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আবদুল কাদের মির্জার অনুসারীদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখান থেকে তারা পৌর ভবনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এর কিছুক্ষণ পর মেয়র কাদের মির্জার ছেলে তাশিক মির্জার নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক থানার সামনে আসলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
হাজার কোটি টাকার মালিক ওবায়দুলের স্ত্রী : গতকাল ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, আজ সংবাদপত্রগুলোর মুখ রুদ্ধ করে দিয়েছে। তাদের কথা বলতে দিচ্ছে না। তারা সত্য ঘটনা এখান থেকে উদঘাটন করেছে। সেটা ওবায়দুল কাদের প্রকাশ করতে দিচ্ছে না। তার কি স্বার্থ। সে কি আমাদের হত্যা করতে চায়? এটার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে বলে দিচ্ছি।
এ সময় তিনি বলেন, তোমার পুলিশ বাহিনী এবং প্রশাসন সামলাও বলে দিচ্ছি। তুমি জেলে নেবে হত্যা করবে। তোমাকে আমরা ভয় করি না। তোমার খাইও না পরিও না। কোম্পানীগঞ্জে যে উন্নয়নগুলো হয়েছে সেটা নেত্রীর কারণে হয়েছে। সারা বাংলাদেশে হয়েছে। এখানে কোনো কাজ হয়নি। এখানে এখনো গ্যাস নেই।
কাদের মির্জা আরো বলেন, আমরা তার বাসায় ঢুকতে পারি না। আমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এত দুঃখজনক ঘটনা বাংলাদেশে আর কোনো পরিবারে আছে কিনা সন্দেহ আছে। আমার বিরুদ্ধে পুলিশ, প্রশাসন লেলিয়ে দিয়েছে এটা কিসের ইঙ্গিত বহন করে।
আমাকে গ্রেপ্তার করে কি করবেন গুলি করে মেরে ফেলবেন। আপনার অস্তিত্ব কোম্পানীগঞ্জের মানুষ একদিন শেষ করে ফেলবে। আপনাকেও ছেড়ে দেবে না। কোম্পানীগঞ্জের মাঠিতে এটার সমাধান যদি না হয় আপনি আসতে পারবেন না। প্রয়োজনে আমার রক্ত ঝরবে আমার পরিবারের সদস্যদের রক্ত ঝরবে। আপনাকে কোম্পানীগঞ্জের মাটিতে আর আসতে দেব না।












