অবশেষে রাউজান– ফটিকছড়ির সেতুবন্ধন হচ্ছাঘাট সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জিওবি ও ইসলামিক বন্ডের (সুকুক) প্রকল্পের আওতায়। মনোরম নকশায় নির্মাণাধীন সেতু করা হচ্ছে অনেকটা হাতিরঝিল এলাকার মত করে। পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সেতুটির নির্মাণ ব্যয় হবে প্রায় ২৪ কোটি টাকা।
সর্তাখালের দুই পাড়ের মানুষের মতে সেতুটি নির্মাণ হলে রাউজান– ফটিকছড়ি হয়ে রাঙামাটির দুর্গম উপজেলা সমূহের সাথে যোগাযোগ সহজ হবে। এই পথের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে সামরিক, বেসামরিক পর্যায়ে যোগোযোগসহ নানা কাজে। এছাড়া অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে কৃষিখাতে।
রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নের হচ্ছাঘাট এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনকালে রাউজান–ফটিকছড়ির সুবিধাভোগী মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায় সর্তা হচ্ছে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ঝর্ণাধারায় নেমে আসা একটি খালের নাম। এই খালটির মাধ্যমে বিভক্ত হয়েছে রাউজান–ফটিকছড়ির দুই উপজেলার সীমানা। খালের দুই পাড়ের মানুষের কৃষি খাতের পানির উৎস এই খালে পানি। জীবনধারার সাথে আদিকাল থেকে দুই উপজেলার মানুষের সম্পর্ক নিবিড়। প্রতিবছর এঅঞ্চলের কৃষকরা কৃষিখাত থেকে আয় করেন কয়েক’শ কোটি টাকা। সম্ভাবনাময় এই কৃষিখাত যুগে যুগে অবহেলিত ছিল হচ্ছাঘাটের একটি সেতুর অভাবে। সেতু না থাকায় কৃষকরা উৎপাদিত ফসল ঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারতেন না। স্থানীয়রা বলেছেন, এতদিন খালের হাঁটুপানিতে ছিল দুই পাড়ের মানুষের যোগোযোগ। এপার ওপাড়ে থাকা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা যাওয়া আসা করতো একইভাবে পানি মাড়িয়ে।
এলাকার প্রবীণরা বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে তারা প্রত্যাশায় ছিলেন দুই উপজেলার মানুষের সহজ যোগাযোগ সৃষ্টি করতে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের কাছে ধর্ণা দিয়ে এসেছেন প্রবীণ নবীন সকল শ্রেণির এলাকার মানুষ। হবে, হচ্ছে এই আশ্বাসের উপর ভর করে অপেক্ষায় থাকার মধ্যে সেতুর কাজে ঠিকাদার এসেছেন দেখে দুই পাড়ের মানুষের মাঝে এখন আনন্দ উচ্ছ্বাস।
খবর নিয়ে জানা যায়, ২৩ সালের নভেম্বর মাসে এই সেতুনির্মাণ কাজের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন পাশাপাশি থাকা দুই উপজেলার তৎকালীন দুই সংসদ সদস্য। ওই সময় তারা ভিত্তি স্থাপন করে গেলেও কাজ করার দায়িত্ব প্রাপ্ত ঠিকাদার কাজ না করায় মানুষ আশাহত হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগে কাজ পাওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ঠিক সময়ে কাজে হাত না দিয়ে ফেলে রেখে মেয়াদ শেষ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সাথে চুক্তি বাতিল করে এখন নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নতুন ঠিকাদার কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করেছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের রাউজান উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদীকে বলেন, নতুন দরপত্রের মাধ্যমে এই সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছে কহিনুর এন্টাপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারা কার্যাদেশ পেয়ে গত ২৬ মে প্রকল্প এলাকায় কাজ শুরু করেছে। শর্ত অনুসারে তাদের কাজ শেষ করতে হবে ২৭ সালে ডিসেম্বরের মধ্যে। এই প্রকৌশলী জানান এই সেতুটি নির্মিত হচ্ছে একটি দৃষ্টিনন্দন নকশায়। মূল সেতু লম্বা হবে ১২.১৫ মিটার। দুই পাশে নির্মাণ করা হবে প্রশস্থ সড়ক। এটি হবে উত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র দৃষ্টিআকর্ষণী সেতু।